নন্দন দত্ত, সিউড়ি: এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় নজিরবিহীন সাফল্যের মুখ দেখল বীরভূম৷ একইসঙ্গে বিজ্ঞান এবং কলা বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছে এই জেলার দুই ছাত্র৷ এমন ফলাফলে আপ্লুত গোটা জেলা৷ জোড়া সাফল্যে সকলেই বলছেন, এমন প্রতিভাধর দু’জন বীরভূমের মাটিকে আরও গর্বিত করে তুলেছে৷
উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে যুগ্মভাবে প্রথম হয়েছে বীরভূম জেলা স্কুলের শোভন মণ্ডল। বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ময়ূরেশ্বরের কাথদিঘির বাসিন্দা শোভন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৮৷ বছর দুই আগে কোটাসুর স্কুল থেকে ৬৮৩ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে অষ্টম স্থান অধিকার করেছিল শোভন। আজকের এই অভাবনীয় ফলাফলে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত শোভন এবং তার পরিবার৷ বাবা সুভাষ মণ্ডল পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক৷ তিনি স্পষ্টই বলছেন, উচ্চমাধ্যমিকে ছেলে আরও ভাল ফল করবে, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন৷ তবে সবাইকে পেরিয়ে যে একেবারে প্রথম স্থান দখল করে নেবে, তা ভাবাই যায়নি৷ সুভাষবাবু কিছুটা আক্ষেপের সুরেই বলছেন, কোটাসুর থেকে সিউড়িতে স্থানান্তরিত হওয়ার পর ছেলেকে কিছুটা কষ্ট করেই পড়াশোনা করাতেন৷ তবে সেই কষ্ট আজ লাঘব হল ছেলের শীর্ষ স্থান দখলে৷
শোভনের মা নূপুরদেবী জানান, ‘আমি ছেলেকে কিছুই সাহায্য করতে পারিনি। বরং পা ভেঙে ঘরে ছিলাম। তাতে ছেলের পড়ার ক্ষতি হয়েছে।’ তবে শোভন জানিয়েছে তার ভাল ফলাফলের পিছনে স্কুলের শিক্ষক ও বাবা-মায়ের অবদান যথেষ্ট। পড়াশোনার বাইরে বিরাট কোহলির অন্ধভক্ত শোভন হতে চায় ডাক্তার৷ কারণ, শোভনের মতে, জেলায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থাকলেও, উপযুক্ত চিকিৎসক বা চিকিৎসা পরিকাঠামো নেই৷ সেই অভাব পূরণ করতে চায় শোভন৷
শোভনের পাশাপাশি জেলার আরেক কৃতী ছাত্র রাকেশ দে৷ তবে সাঁইথিয়া টাউন স্কুলের ছাত্র রাকেশ এবছর কলা বিভাগে রাজ্যে সম্ভাব্য প্রথম হয়েছে৷ তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯২৷ সার্বিকভাবে মেধাতালিকায় রাকেশের স্থান চতুর্থ৷ সংস্কৃত দর্শনে ১০০র মধ্যে ১০০ই পেয়েছে এই মেধাবী ছাত্র৷ বাংলা, ইংরাজি, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান – সব বিষয়েই রাকেশের প্রাপ্ত নম্বর ৯০ এর উপরে৷ মাধ্যমিকে ৬৮১ পেয়ে দশম হয়েছিল সে। তখন থেকেই তার লক্ষ্য ছিল উচ্চমাধ্যমিক। বাবা রঘুনাথ দে বিএসএনএলের কর্মী। তিনি বলছেন, ‘রাকেশের দিদিও মেধাবী ছিল। মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছিল। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার চারদিন আগেই সে সকলকে ছেড়ে চলে যায়। তাই রাকেশের পড়ার জন্য আমরা চাপ দিই নি। পড়ার সময়টুকু বাদ দিলে ক্রিকেট পাগল রাকেশ। রাত জেগে আইপিএল খেলা দেখেছে। আমার ইচ্ছে না থাকলেও ওর জন্য রাত জেগেছি। তবে পড়াশোনা নিয়ে যা করার, ও নিজেই করেছে।’ ইতিহাসপ্রিয় রাকেশ ইতিহাসের অধ্যাপক হতে চায়। এখন প্রেসিডেন্সি কিংবা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে ভরতি হওয়া রাকেশের লক্ষ্য।
ছবি: সুশান্ত পাল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.