সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: রায়দিঘিতে শ্বশুর-জামাইয়ের জমজমাট ভোটের (WB Panchayat Election 2023) লড়াই। পঞ্চায়েতের আসনে জামাই তৃণমূল প্রার্থী। একই আসনে শ্বশুর লড়ছেন বিজেপির প্রার্থী হয়ে। লড়াই বেশ জমে উঠলেও কিছুটা অস্বস্তিতে বিজেপি প্রার্থীর কন্যা তথা তৃণমূল প্রার্থীর স্ত্রী। নির্বাচনে কাকে সমর্থন করবেন, তা ভেবেই হন্যে তিনি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি বিধানসভার নন্দকুমারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পয়লাঘেরী গ্রামের ২৭৩ নম্বর বুথটি প্রথম থেকেই সিপিএমের (CPM) শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। ওই বুথে সিপিএমকে হারানো চাট্টিখানি কথা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সেই অবস্থার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। সেখানে এক সময় সিপিএমের দু’বারের পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন পালানচন্দ্র পাইক। ২০১৮-তে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। আর এবার পঞ্চায়েত ভোটে ২৭৩ নম্বর আসনে বিজেপির প্রার্থী তিনিই। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু পালানবাবুর লড়াই অনেকটাই কঠিন করে দিয়েছেন তাঁর জামাই সুষেণজিত মণ্ডল। সুষেণজিত এবারই ওই একই আসন থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। গ্রামসভায় শ্বশুরের বিরুদ্ধে শাসক দলের হয়ে সম্মুখসমরে জামাই।
এ ব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুষেণজিত বলেন, “শ্বশুরমশাইকে শ্রদ্ধা করি। উনিও আমাকে যথেষ্ট ভালবাসেন। করেন জামাই আদরও। ভোটে আমার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আমাদের সম্পর্কে কোনদিনই চিড় ধরবে না। এটা রাজনৈতিক লড়াই। সম্পর্ক কোনও বাধা হবে না।” তিনি আরও বলেন, “শ্বশুরমশাই বিজেপির প্রার্থী হলেও তাঁর কাছে ভোটে জিততে আশীর্বাদ চাইব। আশা করি, আমি যাতে জিততে পারি সেজন্য আমাকে আশীর্বাদই করবেন উনি। মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের পক্ষে মানুষের কাছে ভোট চাইছি। মানুষও আমাকে নিরাশ করবেন না।” বিজেপি প্রার্থী শ্বশুরমশাই পালানচন্দ্র পাইক জানান, “রাজনীতির লড়াই হচ্ছে। এ লড়াই মতাদর্শের। প্রত্যেকেরই ভিন্ন ভিন্ন নীতি ও আদর্শ থাকতেই পারে। জামাই তৃণমূলের হয়ে আমার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তা বলে আমাদের সম্পর্কের কোনও অবনতি হবে না। শ্বশুর-জামাইয়ের সম্পর্ক সুদৃঢ়ই রয়েছে। থাকবেও।”
একদিকে বাবা অন্যদিকে স্বামী। কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়েছেন তনুশ্রী দেবী। তৃণমূল প্রার্থীর স্ত্রী তনুশ্রী পাইক মণ্ডল অবশ্য জানিয়েছেন, “স্বামীর হয়েই প্রচারে বেরবেন তিনি। তবে বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অটুটই থাকবে। ভোটের রাজনীতি বাবা ও মেয়ের সেই সম্পর্কে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারবে না। বাবা ৩ নং ঘেরীর ২৭৬ বুথের বাসিন্দা। আর আমার শ্বশুরবাড়ি ২৭৩ নম্বর বুথে। অর্থাৎ মেয়ের বাড়িতে বাবা এসেছেন। এছাড়া আর কিছুই নয়।” অতএব, বিরোধী ও শাসক শিবিরের পক্ষে শ্বশুর-জামাইয়ের এই ভোটের লড়াই নিঃসন্দেহে অন্য মাত্রা দিয়েছে এলাকায় ভোটের রাজনীতিতে। গ্রামবাসীদের আলোচনার বিষয়বস্তু এখন শ্বশুরমশাই ও জামাইয়ের ভোটযুদ্ধ নিয়েই। শেষপর্যন্ত জয়ের মুকুট কে পরবেন তা দেখতেই এখন মুখিয়ে আছেন সকলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.