সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: খাতায় কলমে এখনও রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। বিধায়ক সংখ্যার বিচারে বিজেপির থেকে কয়েকগুণ এগিয়ে আবদুল মান্নানরা, বামেদের থেকেও বেশি তাঁদের বিধায়ক সংখ্যা । কিন্তু পঞ্চায়েতের ফলে কোথায় কংগ্রেস? সত্যিই তো দূরবীণ দিয়ে খোঁজার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের। রাজ্যের অন্য প্রান্ত তো বটেই তথাকথিত গড় হিসেবে পরিচিত মালদহ, মুর্শিদাবাদেও কার্যত নিশ্চিহ্ন হাত শিবির।
দীর্ঘদিন ধরে অধীর গড় হিসেবে পরিচিত মুর্শিদাবাদে এবার পঞ্চায়েতে জয়ের বিষয়ে দুই সংখ্যায় পৌঁছতে পারেনি কংগ্রেস। ভোটের আগেই জেলা পরিষদ হারিয়েছিল কংগ্রেস। মনোনয়ন পর্বে নজিরবিহীন সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি। দাবি করছিলেন ভোট হলে অন্তত লড়াই দেবে তাঁর দল । কিন্তু জেলা পরিষদের যে আসনগুলিতে ভোট হল সেগুলিতেও দাগ কাটতে পারেনি হাত শিবির। ২০ আসনের ২০ টিতেই জয় নিশ্চিত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। একই অবস্থা পঞ্চায়েত সমিতিরও। ২০১৩ পঞ্চায়েত নির্বাচন হোক বা ২০১৪ লোকসভা এমনকী ২০১৬ বিধানসভাতেও অধীরের জেলায় তৃণমূলের থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে ছিল কংগ্রেস। এরপর মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক হিসেবে পাঠানো হয় শুভেন্দু অধিকারীকে। বদলাতে থাকে ছবিটা, একের পর এক কংগ্রেসের নেতামন্ত্রীকে দলে টানতে থাকে তৃণমূল, এখন পরিস্থিতি যা তাতে নিজের লোকসভা আসন বাঁচাতেই হিমশিম খেতে হবে অধীর চৌধুরিকে ।
শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মালদহ জেলাতেও একই হাল কংগ্রেসের। ২০১৬ বিধানসভায় যে তৃণমূলকে শূন্য আটকে দিয়েছিল বিরোধীরা, সেই তৃণমূলই পঞ্চায়েতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিজেপিও বেশি আসন পেয়েছে কংগ্রেসের থেকে। উত্তর দিনাজপুরেও বিজেপির কাছে দ্বিতীয় স্থান হারাতে হয়েছে কংগ্রেসকে । বেশ কিছু জায়গায় জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থীদের থেকে ভাল ফল করেছে নির্দলরাও।
২০১৩ পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় ভাল ফল করেছিল কংগ্রেস । মালদহ, মুর্শিদাবাদে তৃণমূলকে রুখে দিয়েছিলেন অধীর চৌধুরি, মৌসম নূররা। উত্তর দিনাজপুরেও দীপা দাশমুন্সিদের দৌলতে বেশ কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিল দেশের সবচেয়ে পুরনো পার্টি। নদিয়া, পুরুলিয়ার বেশ কিছু অংশেও ভাল ফল করেছিল কংগ্রেস। মোটের উপর ১১ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেলেও আসন সংখ্যার বিচারে তা ছিল বেশ চমকপ্রদ। বিজেপি তো বটেই আসন সংখ্যার বিচারে তখনকার প্রধান বিরোধী দল বামেদেরও টক্কর দিচ্ছিলেন অধীররা। কিন্তু বিজেপির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই জমি হারাতে থাকে কংগ্রেস। আপাতত রাজ্যে চতুর্থ শক্তিতে পরিণত হয়েছে দেশের সবচেয়ে পুরনো দল। অধীরবাবুরা অবশ্য এই ফলকে পুরোপুরি জনগণের রায় মানতে নারাজ । তাঁদের দাবি, শাসকদলের নজিরবিহীন সন্ত্রাসই পরাজয়ের মূল কারণ। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অজুহাত দেখিয়ে রাজ্যপালের কাছে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির আবেদন জানানোরও পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। কিন্তু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন শুধু সন্ত্রাসের অজুহাত দিয়ে যতই মুখ বাঁচানোর চেষ্টা করুক কংগ্রেস, দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা ভোটের ফলেই প্রকাশ পেয়েছে ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.