শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: ‘ব্রহ্মা জানে গোপন কম্মটি’র শবরীকে পৌরহিত্য করতে কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি। কারণ, মহিলাকে পুরোহিত হিসেবে মেনে নিতে আজও প্রস্তুত নয় সমাজের একটা বড় অংশ। তবে উত্তর দিনাজপুরের বাস্তবের ‘শবরী’র গল্পটা ভিন্ন। তাঁকেও লড়াই করতে হয়েছে ঠিকই তবে পরিবার পাশেই ছিল। সোমবারই মন্ত্রোচ্চারণ করে চার হাত এক করালেন তিনি।
সোমবার রাতে উত্তর দিনাজপুরের (North Dinajpur) রায়গঞ্জের মোহরকুঞ্জ ছিল জমজমাট। বর-কনে, সেই চেনা ভিড়। তবে পার্থক্য অন্য জায়গায়। পুরোহিতের আসনে বসেছিলেন এক তরুণী। যার নাম সুলতা মণ্ডল। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের ওই তরুণী স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছেন। পৌরহিত্য নিয়ে ডিপ্লোমা করেছেন। তাই পুজো করেন বহু দিন ধরেই। সম্প্রতি রায়গঞ্জের বীরনগরের ঋতুপর্ণা হবু স্বামী হেমতাবাদের রাজ দে-র কাছে আবদার করেন, তাঁদের বিয়েতে পৌরহিত্য করুক কোনও মহিলা। বিষয়টি পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেন তাঁরা। সম্মতি দেন অভিভাবকরা। এরপরই সুলতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। বিষয়টি জানার পরই ঋতুপর্ণা-রাজের বিয়ে দেখার অপেক্ষায় ছিলেন প্রত্যেকে।
১ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকালে নির্দিষ্ট সময়ে কনের বাড়িতে হাজির হন সুলতা। বিয়ের অধিবাস থেকে শুরু করে নারায়ণ শিলার পুজো এবং বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে ঋতুপর্ণা-রাজের চার হাত এক করে দেন তিনি। বিরল এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকেন নিমন্ত্রিতেরা। কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন ঋতুপর্ণা? তিনি জানিয়েছেন, “জন্মদাত্রী মহিলা, ইচ্ছে ছিল বিশেষ এই দিনটিতে কোনও মহিলাই তাঁকে নতুন জীবনে প্রবেশ করাক। সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত।” হবু স্ত্রীর এই ইচ্ছে ফেলতে পারেননি রাজ। ফলত রায়গঞ্জের বুকে এই বিরল ঘটনা। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও বঙ্গবাসী এহেন ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। তবে আজও মহিলারাও যে পৌরহিত্য করতে পারেন তা অনেকেই কল্পনাও করতে পারেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.