ছবি: প্রতীকী
সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: আজ, সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। রাজ্যের অন্যতম মেগা পরীক্ষা মাধ্যমিক নির্বিঘ্নে শুরু করতে নজিরবিহীন উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস রুখতে ত্রিস্তরীয় ব্যবস্থা, পরীক্ষাকেন্দ্রকে স্পর্শকাতর ঘোষণা করে কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা। বিশেষ অটো করে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বিভিন্ন জেলায় কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েছেন জেলাশাসক-সহ পদস্থ আধিকারিকরা। এক শুভেচ্ছা বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যের সমস্ত পরীক্ষার্থীকে শুভেচ্ছা জানাই ও তাদের সাফল্য কামনা করি। এবছর ১১ লক্ষ ২ হাজার ৯২১ জন পরীক্ষার্থী মাধ্যমিকে বসছে। গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩১০৭৫ জন বৃদ্ধি পেয়েছে।
এবারের মাধ্যমিকে টেক্কা দিচ্ছে ‘কন্যাশ্রী’রাই। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে জানানো হয়েছে, চলতি বছর ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার বেশি। ৫৬.৩৫ শতাংশ ছাত্রী মাধ্যমিকে বসছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন প্রকল্প চালু করায় নারীশক্তির এই অগ্রগতি। এমনটাই দাবি করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী থেকে আমলারা। কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্পের সুফল হিসাবেই তাঁরা দেখছেন বিষয়টিকে। শিক্ষার আঙিনায় মেয়েদের আরও বেশি করে টেনে আনতে রাজ্যের এই প্রকল্পগুলি অনুঘটকের কাজ করেছে। তাঁদের কথায়, কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করার পর নাবালিকা বিয়ে যেমন বন্ধ হয়েছে, কমেছে স্কুলছুটের সংখ্যাও। ফলে বেড়েছে ছাত্রীর সংখ্যা।
মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্রের সুরক্ষা বাড়াতে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রশ্নপত্রের সিল খুললে পর্ষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে তার খবর পৌঁছবে। পর্ষদের সার্ভারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই তথ্য নথিভুক্ত হয়ে যাবে। পর্ষদ সূত্রে খবর, বিশেষভাবে বানানো প্যাকেটে প্রশ্নপত্র রাখা থাকবে। তাতে আলাদা আলাদা করে স্টিকার লাগানো থাকবে। সকাল ১১.৪৫ মিনিটে শুরু হবে পরীক্ষা। তার পাঁচ মিনিট আগে অর্থাৎ ১১.৪০-এ ওই প্যাকেট খুলবেন পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা। এই নিয়ম লঙ্ঘন করে কোনও প্যাকেট খোলা হলে তার খবর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পর্ষদের দপ্তরে চলে আসবে। পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ফোন, ক্যালকুলেটর বা অন্য কোনও ইলেকট্রনিক বস্তু নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কোনও পরীক্ষার্থী নিষেধ না মানলে তার পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হবে।
পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সুবিধার্থে পরীক্ষার আগে থেকেই একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যা সকাল আটটা থেকে রাত ১০টা অবধি খোলা থাকবে। ছাত্রছাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারে তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন। যেমন বীরভূম জেলার তিনটি মহকুমায় ১২টি স্পর্শকাতর স্কুলকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে রামপুরহাটের ৭টি, বোলপুরের তিনটি ও সিউড়ির দুটি স্কুল আছে। এই সব পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রতি ঘরে তিনজন করে শিক্ষক থাকবেন। নজরদারির জন্য রাখা হচ্ছে ভিডিওগ্রাফি। থাকবে পর্যাপ্ত পুলিশ। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে সিসিটিভি লাগানো হয়েছে। পরিবহণ দপ্তরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রত্যেকটি রুটে যেন পর্যাপ্ত গাড়ি চলাচল করে, তা দেখতে হবে। ব্লক প্রশাসনকে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, প্রত্যেকটি ব্লকে যেন সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স তৈরি থাকে। পরীক্ষার সময় যেন বিদ্যুৎ ঘাটতি না হয়। এ বছর অলচিকিতেও পরীক্ষা দেওয়া যাবে।
শুধু পরীক্ষার্থীরাই নয়। ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার চাপে অভিভাবকদের অবস্থাও শোচনীয় হয়ে ওঠে। তাই অভিভাবকদের চিন্তা লাঘব করতে বিশেষ ব্যবস্থা করছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বরফ-কর্পূর জল ও হালকা খাবার। পুরসভার গাড়ি দাঁড়িয়ে থেকে জল দেবে। সেই জল শোধন করেই তুলে দেওয়া হবে চিন্তিত অভিভাবকদের হাতে। শহর কলকাতা সহ দুই ২৪ পরগনা ও হাওড়া, হুগলির স্কুলগুলিতে এই বিধি ব্যবস্থা করা হয়েছে, তৃণমূলের তরফে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.