কল্যাণ চন্দ্র, বহরমপুর: আসল নাম পাপিয়া খাতুন। কিন্তু পাপিয়ার আড়ালে ফেসবুকে কখনও সে আয়েশা, কখনও পিয়াসা, তিয়াসা, কখনও আবার সারা, সাবা! নাম-পরিচয় বদলে একের পর এক পুরুষকে বিয়ে করে তাদের সর্বস্বান্ত করেছে নানা নামের একই মহিলা। এ যেন ঠিক পর্দার ‘ঠগিনী’র বাস্তবায়ন। রুপোলি পর্দার ঠগিনী একের পর এক পুরুষকে বিয়ে করে ফুলশয্যার রাতে সোনাদানা হাতিয়ে চম্পট দিত। আর এই ঠগিনী সোস্যাল মিডিয়ায় যৌন আবেদন মাখা ছবি পোস্ট করে একাধিক পুরুষকে রূপের মায়াজালে ফাঁসিয়ে একেবারে সর্বস্বান্ত করে পালিয়েছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য প্রতারিত পুরুষদেরই একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে বীরভূমের ওই যুবতীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
বহরমপুর থানার আইসি উদয়শংকর ঘোষ জানান, স্থানীয় বাসিন্দা বাদশা শেখ নামে এক যুবক ডক্টরেট করছেন সিঙ্গাপুরে। তিনি কয়েকমাস আগে পাপিয়া খাতুনকে ফেসবুকে দেখে পছন্দ করে বসেন। আলাপ হয়। ক্রমে দু’জনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, বিয়ে করেন দুজনে। বহরমপুরের ভাড়াবাড়িতে নবদম্পতি সংসার পাতে। অভিযোগ, সেখান থেকে বাদশার ল্যাপটপ, পাসপোর্ট, টাকাপয়সা নিয়ে নতুন বউ চম্পট দেয়। বাদশা বহরমপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তে নামে। বীরভূম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পাপিয়াকে। জানা যায়, একা বাদশাই নন, মহিলার একেকবার একেকরকম পরিচয়ের মোহে পড়ে আরও অনেকেই এভাবে প্রতারিত হয়েছেন।
কীভাবে সে প্রেমের জালে এতজনকে ফাঁসাল? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর বত্রিশের যুবতীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েই কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ে। জানা যায়, বাদশার আগেও মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহের অন্তত আট যুবককে সে বিয়ে করেছিল। বাদশা ছিলেন নবম স্বামী। প্রতিবারই স্বামীদের ‘ঘোল’ খাইয়ে টাকা ও জিনিসপত্র হাতিয়ে, ব্ল্যাকমেল করেছে নিরন্তর। তার ‘মোডাস অপারেন্ডি’ বদলেছে বারবার। কোথাও বিয়ের এক-দেড় মাসের মধ্যে হরেক অজুহাতে কখনও ডিভোর্সের হুমকি, কখনও বা শারীরিক নিগ্রহের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো। শাস্তি, সম্মানহানির ভয়ে টাকাপয়সা দিয়ে মিটমাট করে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন স্বামীরা।
আইসি জানান, বিভিন্ন নামে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে পাপিয়ার পোস্ট করা উত্তেজক ছবি দেখে অনেকে ফাঁদে পড়েছেন। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর বিয়ে। আর তারপর নিজের আসল রূপ প্রকাশ করত ঠগিনী। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, তার শিকার ন’জন। কিন্তু সংখ্যাটা আরও বেশি হতে পারে বলে পুলিশের সন্দেহ। ‘ঠগিনী’র প্রলোভনে পা দিয়ে মোট ক’জনের হাঁড়ির হাল হয়েছে, জানতে জেরা চলছে। দেখা হচ্ছে, পাপিয়ার পিছনে কোনও সংগঠিত চক্র রয়েছে কিনা। শুক্রবার পাপিয়াকে বহরমপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.