ছবি: প্রতীকী।
দেব গোস্বামী, বোলপুর: বাড়ির উঠোনের একপাশে মাটির ঘর। নেই দরজা, জানলা। ঘরের এক কোণে ভাঙা চৌকি। পাশে উঠোনের এক কোণে দেওয়ালে পোঁতা রয়েছে লোহার পেরেক। তার সঙ্গেই দিনরাত শিকলে (Chain) বাঁধা অবস্থায় মেয়ে। চিকিৎসার জন্য সবরকম চেষ্টা করেও সর্বস্বান্ত, তবুও সুস্থ হয়নি মেয়ে। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে বাধ্য হয়েই মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েকে বেঁধে রেখেছেন শিকলে। বীরভূম (Birbhum) জেলার মুরারই দু’নম্বর ব্লকের পাইকর থানার বোনহা গ্রামে দেখা গেল এমনই করুণ দৃশ্য।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিন বছর ধরে শিকলে বাঁধা মুরারইয়ের বোনহার গ্রামের মানসিক ভারসাম্যহীন সুন্দরী খাতুন। বয়স তাঁর ২৬ বছর। এর আগে কয়েকবার তিনি বাইরে চলে যাওয়ায় অন্যান্য থানার পুলিশ গ্রামে পৌঁছে দিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, ”ওর বিবাহের কথা শুনেছিলাম। কিন্তু আমরা কেউ ওর স্বামীকে কোনওদিন দেখিনি। তবে বিয়ের পরই ঘটে অঘটন।” জানা যাচ্ছে, মানসিক ভারসাম্য (Mentally Challenged) হারিয়ে ফেললেও প্রথমদিকে শান্ত থাকত সুন্দরী। কিন্তু ইদানিংকালে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। সুযোগ পেলেই বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করে। বাধা দিলে পরিবারের মা,ভাই-সহ গ্রামবাসীদের মারধর করে। এর জন্যই শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয়েছেন মা।
মা রুজি বিবি জানান, অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাঁকে সংসার চালাতে হয়। স্বামী অন্যত্র চলে গিয়েছেন কয়েক বছর আগে। দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে কিছুটা মেয়ের মতোই মানসিক ভারসাম্যহীন। ওষুধের টাকা যোগাড় না করতে পারায় ভাল চিকিৎসা করাতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়েই ঘরেই তিন বছর ধরে শিকলে বাঁধা রয়েছে সুন্দরী। চিকিৎসার জন্য বারবার স্থানীয় পঞ্চায়েতে আবেদন জানানো সত্বেও মেলেনি আশ্বাস। আক্ষেপের সুরে তিনি আরও বলেন, আবাস যোজনার বাড়িও দেওয়া হয়নি। যদিও মুরারই দু’নম্বরের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক (BDO) নাজির হোসেন জানান, “আমি খুব শিগগিরই ওই গ্রামে যাব এবং চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করব। মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটি যাতে সুচিকিৎসা পায় সেই ব্যবস্থা করব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.