রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: সাধারণই শক্তি, সাধারণই সাহসের প্রতীক! সাধারণ নাগরিকের মধ্যে যে অসীম সাহস লুকিয়ে রয়েছে, ফের তার নমুনা দিলেন আলিপুরদুয়ারের এক গৃহবধূ। রাতদুপুরে চিতাবাঘের আক্রমণ থেকে পথকুকুরকে বাঁচাতে যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তিনি, তা দেখে বিস্মিত সকলে। পরিবার থেকে প্রতিবেশী, প্রিয় কুকুরের প্রাণ বাঁচিয়ে তাকে সুস্থ করে তোলা ওই গৃহবধূর সাহসকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সকলে।
আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকের পাইটকাপাড়া চা বাগানের মাতাল মোড় এলাকার বাসিন্দা দীপশিখা সমাদ্দার। সাধারণ গৃহবধূ দীপশিখাদেবীর পথকুকুরদের প্রতি অবাধ স্নেহ। তাদের কয়েকটা তাঁর পায়ে পায়ে ঘোরে, খাওয়াদাওয়া করে, রাতে বাড়ির বাইরে ঘুমোয়। বৃহস্পতিবার রাতেও সেভাবেই দুটি কুকুর দীপশিখাদেবীর বাড়ির বাইরে ঘুমোচ্ছিল। রাত ২টো নাগাদ তিনি কোনও কারণে উঠেছিলেন। তারপরই সেই হাড়হিম করা দৃশ্য দেখেন। দীপশিখার কথায়, ”আমি গেটের ভিতর থেকে দেখলাম, কালো একটা কুকুরকে মুখে নিয়ে চিতাবাঘটা চলে যাচ্ছে। দেখেই আমি চিৎকার করে উঠি। তালা খুলে গেটের বাইরে বেরিয়ে যাই। তখনও চিতাবাঘটা পাঁচিল পেরিয়ে চলে যেতে পারেনি। আমি চিতাবাঘটাকে একটা ঢিল ছুঁড়ে দিই। সে ভয় পেয়ে হোক বা অন্য কারণে কুকুরটাকে মুখ থেকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।”
এরপর ওই কালো-সাদা আশ্রিয় কুকুরটিকে বাড়িতে এনে শুশ্রূষা করেন দীপশিখাদেবী। প্রাথমিক ভয় কাটিয়ে সেও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। এখন আর এক মুহূর্তও জীবনদাত্রীর কাছছাড়া হচ্ছে না সে। খাওয়া, ঘুম, ঘুরে বেড়ানো সবই করছে দীপশিখাদেবীর বাড়ির চৌহদ্দিতে। এভাবে মাঝরাতে চিতাবাঘের সঙ্গে প্রায় লড়াই করতে নামলেন, ভয় লাগল না? গৃহবধূর সাহস দেখে অনেকে কুর্নিশ জানানোর পাশাপাশি এই প্রশ্নও করেছেন। একটু হেসে দীপশিখা সমাদ্দার বলছেন, ”আসলে তখন শুধু মনে হচ্ছিল, কুকুরটাকে বাঁচাতে হবে। তাই যা করার, করেছি।” গোটা ঘটনাটা রেকর্ড হয়ে আছে বাড়ির বাইরের সিসিটিভি ক্যামেরায়। সেই দৃশ্য দেখে পশুপ্রেমীরাও দীপশিখাদেবীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.