দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: এবার রাস্তা থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট এক হনুমানকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে মানবিক দৃষ্টান্তের নজির স্থাপন করলেন মানকুণ্ডুর এক পশুপ্রেমী গৃহবধূ। শনিবার ওই গৃহবধূ গুরুতর জখম ওই হনুমানটিকে বনদপ্তরের হাতে তুলে দেন। উদ্ধারকারী ওই গৃহবধূর নাম তন্দ্রা ভট্টাচার্য। বাড়ি চন্দননগরের মানকুণ্ডুর ষ্টেশন রোডের পীরতলায়।
[ব্লেডতার দিয়ে ঘেরা ডুয়ার্সের চা-বাগান, ক্ষতবিক্ষত হাতির দল]
ঘটনাসূত্রে জানা যায় হনুমানটি বাচ্চা কোলে নিয়ে ভদ্রেশ্বর মনসাতলা এলাকায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ পরিবাহী তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর জখম অবস্থায় মাটিতে পড়ে যায়। দলের অন্যান্য হনুমানরা মায়ের কোল থেকে বাচ্চা হনুমানটিকে নিয়ে চলে গেলেও মা হনুমানটি রাস্তার উপর পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দারা ভেবেছিল হনুমানটি বাঁচবে না তাই তারা এ বিষয়টিকে অতটা গুরুত্ব দেন না। একসময় এলাকার মানুষ এটাও ভাবেন যে, জখম ওই হনুমানটিকে রাস্তার ধারে একটি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসবেন। কিন্তু এলাকারই এক বাসিন্দার কাছ থেকে জখম হনুমানটির কথা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান মানকুণ্ডুর তন্দ্রা ভট্টাচার্য। তারপর পরম স্নেহে হনুমানটিকে কোলে তুলে নিয়ে তিনি একটা টোটো করে তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। তন্দ্রাদেবী বাড়িতে হনুমানটিকে নিয়ে এসে তাকে দুধ খাওয়ান। স্থানীয় পশুর ডাক্তার ডেকে তাকে যন্ত্রণা কমানোর ইঞ্জেকশন দেন। হনুমানটির পেট অসম্ভব রকম ফুলে যাওয়ায় তাকে অ্যান্টাসিডও খাওয়ান। হনুমানও তন্দ্রাদেবীর নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে ক্রমশ স্বাভাবিক হলেও তার ওঠার ক্ষমতা ছিল না। তন্দ্রাদেবী জানান, হনুমানটির হাত পুড়ে গিয়ে হাড় বেরিয়ে গিয়েছিল। তিনি পশু চিকিৎসককে ডেকে এনে দেখান। কিন্তু তাঁরা জানান হনুমানের চিকিৎসা করার সাধ্য তাঁদের নেই। এদিকে হনুমানটির বেডসোর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি হুগলির বনদপ্তরকে খবর দেন যাতে তারা হনুমানটির চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ করে তুলতে পারে। রবিবার বনদপ্তরের কর্মীরা এসে হনুমানটিকে নিয়ে যায়।
[দুধের শিশু-সহ দম্পতিকে হেনস্তা, কাঠগড়ায় বিএসএফ আধিকারিক]
তন্দ্রাদেবী জানান, দু’দিনেই হনুমানটি অনেক আপন হয়ে গিয়েছিল। মানুষের মতো সবকিছু বুঝত। মাঝে মধ্যেই এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের বাচ্চাকে খুঁজত। হনুমানটি যেন পরিবারেরই একজন হয়ে উঠেছিল। তাই বনদপ্তরের কর্মীরা নিয়ে যাওয়ার সময় মনটাও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তবু হনুমানটি যাতে সুস্থ হয়ে ওর বাচ্চাকে ফিরে পায় এই কামনাই করেন তন্দ্রাদেবী। গৃহবধূর পশুর প্রতি এই অকৃত্রিম ভালবাসা দেখে এলাকার মানুষও মুগ্ধ। তারা জানান, তন্দ্রাদেবী এর আগেও একটি বিরল প্রজাতির তক্ষক উদ্ধার করে বনদপ্তরের হাতে তুলে দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.