চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: কবির খেরোর খাতায় উপরে লেখা ‘জয় শ্রী দুর্গা’। তার নিচে কবি লেখেন এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু মুসলমান। এটাই ভারতবর্ষ। এটাই বাংলা। যা কবিতায় তুলে ধরেছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। খেরো খাতা আদতে রাফ খাতা। নিজের খেয়ালে খাতার পরতে পরতে আঁকিবুকি কেটেছিলেন কবি।
নজরুলের এমন ১৩টি খাতার খোঁজ আগেই পেয়েছিলেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এবার সেগুলির ডিজিটালাইজেশনের কাজ শুরু হয়েছে। অর্থাৎ, খাতার প্রতিটি পৃষ্ঠা স্ক্যান করে কম্পিউটারে সুরক্ষিত রাখা। আর সেটা করতে গিয়েই তাজ্জব গবেষকরা।
উঠে আসছে বিদ্রোহী কবির সাধন-ভজনের নানান অজানা দিক। খুলে দিয়েছে তাঁর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তথা অধ্যাপক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ব্রিটিশ লাইব্রেরির ফান্ডে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ও আসানসোল বিবি কলেজ যৌথ উদ্যোগে কবির খেরোর খাতা ও পারিবারিক চিঠিগুলির ডিজিটেলাইজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন গান শুরুর আগে কবি খাতার উপর লিখেছেন, জয় শ্রী দুর্গা। খাতায় খেরোর খাতা গবেষকদের হাতে তাঁর জ্যোতিষ চর্চার প্রমাণও মিলেছে।”
ওইসব খাতায় প্রচুর গান লিখেছেন নজরুল। ইসলাম ধর্মের ভক্তিমূলক সঙ্গীত থেকে গজল, হিন্দুধর্মের শ্যামাসঙ্গীত থেকে হরি-বন্দনা-সব সৃষ্টির একত্র সহাবস্থান। লেখার আগে পৃষ্ঠার উপরে লিখতেন- ‘জয় শ্রী দুর্গা’। আবার একই সঙ্গে সাধনায় মগ্ন থাকতেন খোদা ও হরির। খেরো খাতার একটি অংশে লেখা- ‘খোদার রহম চাও যদি, নবি জিরে ধর….।’ ঠিক তার পরের অংশে কবি লিখছেন, ‘আমি নিবেদিত শ্রীহরির নামে….।’ আবার নজরুল জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়েও চর্চাও করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চন্দন কোনার বলেন, “এখন কোনও শিক্ষার আদান-প্রদান হচ্ছে না। তাই হয়তো জাতীয় কবির খেরো খাতার খোঁজ রাখার গরজ হারিয়েছেন পড়শী দেশের শিক্ষার্থীরা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.