মা ও সদ্যোজাতকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: ট্রেনের কামরা এক লহমায় হয়ে গিয়েছিল অস্থায়ী লেবার রুম। স্টেশন চত্বরে রেলকর্মী থেকে অন্যান্যদের ব্যস্ততাও ছিল চোখে পড়ার মতো। একসময় সদ্যোজাতের কান্নার আওয়াজে হাঁফ ছাড়লেন স্টেশনে উপস্থিত লোকজন। ট্রেনের কামরাতেই ভূমিষ্ট হয়ে পৃথিবীর আলো দেখল সদ্যোজাত। নাড়ি কেটে মায়ের কাছে সদ্যজাতকে দেওয়ার পর আনন্দে আত্মহারা হলেন ডাক্তার, নার্সরাও। ট্রেনের কামরায় সদ্যোজাতের জন্মের ঘটনায় নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে দেখা গেল উচ্ছ্বাস।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, জা-এর সঙ্গে গৌহাটি থেকে বিহারের ভাগলপুরে বাড়ি ফিরছিলেন বছর ২৬-এর গর্ভবতী নেহা দেবী। কোয়েম্বাটুর এক্সপ্রেসের যাত্রী হিসেবে যাওয়ার সময় প্রসবযন্ত্রণা ওঠে তাঁর। কিন্তু ট্রেনের মধ্যে কীভাবে সন্তান প্রসব হবে? কাছেপিঠে হাসপাতাল, ডাক্তার কোথায় পাওয়া যাবে? সেই আশঙ্কা ক্রমে বাড়ছিল। আজ বুধবার বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ ওই নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে ওই ট্রেন এসে দাঁড়ায়। ট্রেন থেকে জা-এর সঙ্গে প্ল্যাটফর্মে নেমে পড়েছিলেন ওই তরুণী। তাঁকে দেখেই সন্দেহ হয় রেলকর্মীদের।
দ্রুত খবর দেওয়া হয় আলিপুরদুয়ার রেল হাসপাতালে। কিন্তু ওই তরুণীকে কোনওভাবেই স্টেশন থেকে ওই অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। স্টেশনেই অন্য প্ল্যাটফর্মে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল তিস্তা তোর্ষা এক্সপ্রেস। ওই ট্রেনের একটি কামরা ফাঁকা করে দ্রুত বানানো হয় অস্থায়ী লেবাররুম। ওই সন্তানসম্ভবাকে কামরায় স্থানান্তরিত করা হয়। রেল হাসপাতাল থেকে ডাক্তার, নার্সরাও ডেলিভারির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ওষুধপত্র নিয়ে ওই কামরায় হাজির হন। স্টেশন চত্বরে শুরু হয় চরম ব্যস্ততা।
সাড়ে ১২টার কিছু আগে ভূমিষ্ট হয় সদ্যোজাত। জানা যায়, ওই তরুণী ফুটফুটে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মা ও সদ্যোজাত সুস্থ আছে বলে জানানো হয়। ট্রেনের কামরাতেই প্রতিকূলতার মধ্যে এই সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার ঘটনায় ডাক্তার, নার্স ও রেলকর্মীদের কুর্নিশ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ, যাত্রীরা। কিছু সময় পরে সদ্যোজাত ও মা-কে আলিপুরদুয়ার রেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁরা দু’জনে পর্যবেক্ষণে আছেন বলে খবর।
প্রসবের পর কামরা পরিষ্কার করে যাত্রীদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। গোটা ঘটনায় প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে স্টেশন থেকে রওনা দেয় তিস্তা-তোর্ষা এক্সপ্রেস। যদিও ট্রেনের যাত্রীরা কোনওভাবে ক্ষুব্ধ হননি। বরং রেলের ভূমিকাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। মা ও সদ্যোজাতের সুস্থতা কামনা করেছেন যাত্রীরা। হাসিমুখে তাঁরা রওনা হয়েছেন গন্তব্যে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.