ছবি: প্রতীকী
বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: প্রেমের বয়স বছরখানেক। আর তার মধ্যেই মৃত্যু হল প্রেমিকের। গলায় বিষের জ্বালা নিয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে প্রেমিকা। আবারও একটি প্রেমের পরিণতি হল এমনই।
পুলিশ জানিয়েছে, বিষ পান করা অবস্থায় প্রেমিক-প্রেমিকা দুজনকে পাওয়া যায় নদীর পাড়ে একটি পাটখেতের মধ্যে। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু হয় প্রেমিকের। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তরুণী। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, দুজনেই বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। যদিও মৃত যুবকের কাকার অভিযোগ, “আমার ভাইপোকে মেয়েটির বাড়ির লোকজন বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছে।” পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর অবধি ওই যুবকের বাড়ির লোকজন কেউ কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। মৃত যুবকের প্রেমিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তাঁরা দুজনেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে তরুণী। যে হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে প্রেমিকা, সেই হাসপাতালেরই পুলিশ মর্গে নিয়ে আসা হয় প্রেমিকের মৃতদেহ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যুবকের নাম সমর হীরা। বয়স উনিশ বছর। প্রেমিকা বছর চোদ্দর সুলতা বারুই। সমরের বাড়ি নদিয়ার হাঁসখালি থানার মুড়াগাছা কলোনিতে। সুলতার ভীমপুর থানার নিধিরপোতা গ্রামের বাসিন্দা। নবম শ্রেণির ছাত্রী সে। বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন সমর। বছরখানেক আগে দুজনের দেখা হয়েছিল। বন্ধুত্ব বদলে যায় প্রেমের সম্পর্কে। ফোনে কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে সেই সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছিল। যদিও সম্ভবত ওই সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিলেন না সুলতার বাড়ির লোকজন। আর সেখানেই প্রেমের পথে দেখা দেয় কাঁটা। পুলিশের অনুমান, সেই কারণেই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন দুজনে। পুলিশ জানিয়েছে, হাঁসখালি থানার ভৈরবচন্দ্রপুর বাবলাবন এলাকার চূর্ণী নদীর ধারে একটি পাটখেতের মধ্যে থেকে বুধবার রাতে বিষ পান করা অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন। তারাই দুজনকে প্রথমে বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারপর সেখান থেকে দুজনকে কৃষ্ণনগর শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। অবশ্য কৃষ্ণনগরের নিয়ে যাওয়ার আগেই বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে মারা যান সমর হীরা।
বুধবার সন্ধ্যার পরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সমর। চলে আসেন প্রেমিকার বাড়ির কাছাকাছি। দুজনে দেখা করেন। সুলতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, দুজনে এরপর চূর্ণী নদী পেরিয়ে ওপারে বাবলাবন এলাকায় পাটখেতে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রেমিকাকে বিষ খাওয়ানোর পর বিষ পান করেন সমর। একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিল সুলতা। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, নিজে বিষ পান করার পরও প্রেমিককে বাঁচাতে স্থানীয়দের ডাকাডাকি করেছিল সুলতা। চূর্ণী নদীর মাঝি সুসেন সরকার বলেন, “মেয়েটি এলাকার লোকজনকে ডাকাডাকি করে বলে, আমরা বিষ খেয়েছি, আমাদের বাঁচান। এরপর লোকজন ছুটে যায়।” এরপরই দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সুলতা জানায়, “ও আমাকে বিষ খেতে বলে। আমি খেয়ে নিই। তারপরে কী হয়, আমার পুরোটা মনে নেই।” সুলতা হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তার অবস্থা স্থিতিশীল। এদিকে, মৃত যুবকের কাকা সন্দীপ হীরা মৌখিক অভিযোগ করেছেন, তাঁদের ধারণা, মেয়েটির পরিবারই ভাইপোকে মারধর করে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.