মণিশংকর চৌধুরি: ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০২। এদিনই স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে লেখা হয়েছিল আরও একটি রক্তাক্ত অধ্যায়। গুজরাটের গোধরায় ধর্মোন্মাদরা পুড়িয়ে হত্যা করেছিল ৫৯ জন নিরীহ করসেবককে। ‘সবরমতী এক্সপ্রেস’-এর সেই হতভাগ্য যাত্রীদের চিৎকার হয়তো বা আজও কান পাতলে শোনা যাবে।
সেই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে দেড় দশকেরও বেশি। যথারীতি ঘটনাবলির গদাইলস্করি ‘ময়নাতদন্তে’ আইনের জাল কেটে বেরিয়ে গিয়েছে অনেক দুষ্কৃতীই। একইভাবে গোধরা পরবর্তী গুজরাট দাঙ্গায় অভিযুক্ত অনেকেই আজ ‘মুক্ত বিহঙ্গ’। কাটা ঘায়ের উপর নুনের ছিটের মতো, অভিযুক্তদের মধ্যে অনেকেই আজ গণতন্ত্রের বলে বলীয়ান হয়ে দেশের নীতি নির্ধারক। সেবারে ‘লেফ্ট লিবারেল’ বা দক্ষিণপন্থী মুক্তমনারা মিছিল বের করেই রণে ভঙ্গ দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই রাজনৈতিক ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের মুখে মাঝে মধ্যে ‘গুজরাট দাঙ্গা’র বুলি ফুটলেও গোধরা নিয়ে ‘অজ্ঞাত’ কারণে নীরবতা অবলম্বন করাই শ্রেয় মনে করেন তাঁরা। নিন্দুকেরা বলে, ‘এনারা পক্ষপাতদুষ্ট নিরপেক্ষ শ্রেণিভুক্ত।’
প্রায় ১৮ বছর পর সেই ২৭ ফেব্রুয়ারির দিনই যেন ফিরল দিল্লিতে। রাজধানী দেখল একদল বক ধার্মিকের নগ্ন নৃত্য। রাজনীতির জলে ধর্মের আফিম মিশিয়ে তৈরি পানীয় খেয়ে আম জনতার বাড়িঘর পুড়িয়ে দিল উন্মাদরা। দাঁড়িয়ে দেখল হুকুম সর্বস্ব পুলিশ। যথারীতি শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়ে দায় সেরেছে সরকারও। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবল প্রতিবাদ শুরু করে ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’ নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে। অনেকেই আবার পালটা ‘মুসলিম তোষণে’র অভিযোগ জানাচ্ছেন। এখানেই উঠছে প্রশ্ন, আমরা কি এতটাই নির্বোধ যে ‘গোলি মারো সালো কো’ বললেই, প্রতি ইদে যে বাড়ি থেকে মিষ্টি আসে, সেখানে আগুন লাগিয়ে দেব? না, বছরের পর বছর একসঙ্গে দিওয়ালি পালনের পর ছাগলদাড়ি ‘মোল্লা’র কথায় সেই বাড়িতেই পেট্রল বোমা ছুঁড়ব? এবার সময় এসেছে নিজেদের আয়নার সামনে দাঁড় করানোর। সাম্প্রদায়িকতার ফাটল আমাদের মধ্যেই রয়েছে, ধর্মের ঝড়ে সেটির উপর থেকে ঢাকনাটা সরে গিয়েছে মাত্র। দিল্লি যেন চোখে আঙুল দিয়ে ফের সত্যিটা তুলে ধরল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.