বিরাট কোহলি অবসর নিয়ে জানিয়েছেন, সহজ ছিল না এ সিদ্ধান্ত। কর্মজীবনের স্মৃতিরোমন্থন শুধু তো সুখের নয়। তা বিচিত্র অনুভবের মিশ্ররাগ।
‘অবসর’– এই শব্দটির মধ্যে যতগুলি পরত আছে– আনন্দ ও বেদনা, মুক্তি ও বন্ধন, অব্যাহতি ও মেদুরতা, নতুন ভবিষ্যৎ ও অনিশ্চয়তা, পুরনো বন্ধুদের বলা ‘বিদায়’ এবং ‘মনে রেখো’, আর যে-কাজ থেকে অবসর নেওয়া সেই কাজের কাছেই ফিরে যাওয়ার বাসনা– সবকিছু ফুটে উঠেছে চার্লস ল্যাম্বের (উচ্চারণ ‘ল্যাম’) ক্লাসিক প্রবন্ধ ‘দ্য সুপারঅ্যানুয়েটেড ম্যান’-এ। একটি মানুষ তার দীর্ঘ দিনের প্রাত্যহিক কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পরে, তার মন কি সহজে মানিয়ে নিতে পারে, কর্মহীন জীবনের সঙ্গে? মনকে যেতে হয় দীর্ঘ পথ ও বিচিত্র অবস্থার মধ্য দিয়ে অবসর-জীবনের শূন্য পাতাটি ধীরে-ধীরে ভরিয়ে তুলতে। অবসর-জীবনে কর্মবন্ধন থেকে মুক্তির আনন্দে মিশে থাকে কর্মহীনতার অনিশ্চয়তা ও বেদনা।
এমনই অবস্থার মধ্যে আকস্মিক অবসর গ্রহণের পত্রে নিজের মনের কথাটি কুণ্ঠাহীন ভাষায় ভারি সুন্দর করে প্রকাশ করেছেন বিরাট কোহলি। তিনি আর টেস্ট ক্রিকেট খেলবেন না। লাল বল ও সাদা পোশাকের ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন এই ভাষায় তাঁর অভিমানী সিদ্ধান্তের কথা বিশ্বকে জানিয়ে– ‘আজ যখন এই ফরম্যাট (টেস্ট ক্রিকেট) থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি, তখন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার পক্ষে সহজ ছিল না। তবে, আমার কাছে এটাই সঠিক মনে হয়েছে।… ভবিষ্যতে যখনই টেস্ট কেরিয়ারের স্মৃতি রোমন্থন করব, ঠোঁটের কোণে হাসি থাকবে।’ এই হাসি খুশির? নিজের কৃতিত্ব ও কীর্তির? না কি এই হাসি নীরব সহনের? বেদনার? অভিমানের? ব্যঙ্গের? করুণার?
সমস্ত অবসরের অঙ্গেই জড়িয়ে থাকে ভাবাবেগের মিশ্ররাগ। কর্মজীবনের স্মৃতিরোমন্থন শুধু তো সুখের নয়; বহু বেদনা, আঘাত, গুপ্ত শত্রুতা, ছলনা, শঠতা, মিথ্যাচার, বিশ্বাসঘাতকতা– সবকিছুর স্মৃতিও মিশে থাকে ফেলে আসা কর্মজীবনের স্মরণ ও রোমন্থনে।
তবু কর্মব্যস্ত মানুষের জীবনে আসে অবসরের সময়। কারও জীবনে, বিশেষ করে চাকরিজীবীদের জীবনে, আসে বাধ্যতামূলক অবসর, একটা বয়সের পরে। আর যাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, তাঁদের অবসর নির্ভর করে অনেকটাই নিজের ইচ্ছায়। বা শরীরের আনুকূল্যের উপর। তবে যেসব পেশার সঙ্গে শরীর-স্বাস্থ্য-যৌবন, শারীরিক শক্তি-ক্ষিপ্রতা বা রূপের অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক– সেসব পেশার দৌড় খুব দীর্ঘ হয় না। শিল্পীদের সৃজন থেকে অবসর কি কোনওভাবে নিয়ন্ত্রণ করে বয়স? মাত্র ৪৯ বছর বয়সে, ১৬১৩ সালে, লেখা থামালেন স্বয়ং উইলিয়াম শেক্সপিয়র। বললেন, আর লিখব না।
ওরা লিখুক। তাঁর ‘টেমপেস্ট’ নাটকে প্রসপেরো ভেঙে ফেলল তার জাদুদণ্ড! এই প্রতীকী কাজটি বোঝাচ্ছে, শেক্সপিয়র নিজেই ভাঙলেন তাঁর লেখার কলম। তারপর প্রসপেরোর মুখে বসালেন পাঁচটি শব্দ: ‘Our revels now are ended’! ‘রেভেলস্’– ওই একটি শব্দে লন্ডনে শেক্সপিয়রের কর্মজীবনের সবটুকু ধরা পড়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.