অস্ত্রশক্তিতে যেমন ডাহা ফেল, তেমনই কৌশলগত প্রভাবও হ্রাস পেয়েছে ভারত-পাক সেনা সংঘাতে। কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে চিন।
ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক চার রাতের সামরিক সংঘর্ষ খুব বেশি সময় স্থায়ী না-হলেও, এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যে গভীর ছাপ ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। গোলাবর্ষণ থেমে গেলেও, কূটনৈতিক জলস্রোত, ইতিমধ্যে অঞ্চলটিকে এক নতুন অবস্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে– যেখানে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, চিন হঠাৎ করেই দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূমিকায় স্থবির হয়ে পড়েছে। তাছাড়া, আরও একটি বিষয় হল, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা শক্তি প্রকাশ্যে এসে পড়ল।
ভারত-পাক সেনা সংঘাত যেন চিনের অস্ত্রশক্তি দেখানোর একটা সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। চিন বহু বছর বড় কোনও যুদ্ধ করেনি, ফলে তাদের তৈরি অস্ত্রের ক্ষমতা বিশ্ববাসীকে দেখানোর অভিপ্রায় ছিল। কিন্তু ভারতের অস্ত্রশক্তির সামনে পাকিস্তান যেভাবে ধরাশায়ী হয়েছে, তাতে চিনের আত্মবিশ্বাস ভেঙে পড়তে পারে। শুধু তা-ই নয়, কোনও সময়ে ভারত-চিন যুদ্ধ-সম্ভাবনা দেখা দিলে চিন যে ভারতের সঙ্গে অস্ত্রর লড়াইয়ে পেরে উঠবে না, সেটাও দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেল। পাশাপাশি, ভারত-পাক সংঘর্ষ বিরতিতে আমেরিকার পর্দার আড়ালে অংশগ্রহণ এবং চিনের অনুপস্থিতি একদিকে যেমন চমকপ্রদ– অন্যদিকে তেমনই তা দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক রূপরেখা নির্ধারণেও একটি মোড় ঘোরানোর মতো ঘটনা।
পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-পাক সেনা সংঘাত এবং সংঘর্ষবিরতি পর্বে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল, চিনের কৌশলগত প্রভাবের হ্রাস। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘকালীন সম্পর্ক, চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর এবং ভারত মহাসাগরে বর্ধিত নৌ-বহরের উপস্থিতির মাধ্যমে প্রভাববিস্তারের যে-স্বপ্ন চিন দীর্ঘ দিন লালন করে এসেছে, এই সংঘাতের পর সেটি এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। বিপরীতে ভারত নীরবে কিন্তু দৃঢ়ভাবে কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।
আমেরিকার সহায়তায়, পাকিস্তানকে সংঘর্ষবিরতিতে রাজি করাতে পেরে, চিনকে ছাড়া, ভারত এই সংকট মোকাবিলার মাধ্যমে তার কূটনৈতিক পরিপক্বতা প্রমাণ করেছে। চিনের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা। পাকিস্তানের উপর তার প্রভাব কমে যাওয়া মানেই দক্ষিণ এশিয়ায় চিনের কৌশলগত পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। এমনকী বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার ও পাকিস্তানে চিনের যে অর্থনৈতিক ও পরিকাঠামোগত বিনিয়োগ-ভিত্তিক প্রভাব ছিল, তাতেও এবার টান পড়তে পারে।
আমেরিকার সক্রিয় ভূমিকায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং চিনের নিষ্ক্রিয়তা এই বার্তা দিচ্ছে– দক্ষিণ এশিয়া এখন আর এককভাবে কোনও শক্তির নিয়ন্ত্রণে নেই। এটি এক বহুমুখী, পুনর্গঠিত ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্র হয়ে উঠছে, যেখানে প্রভাববিস্তার করতে হলে নতুনভাবে কৌশল সাজাতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.