ফাইল চিত্র
সাতটি বহুদলীয় প্রতিনিধি দল গঠনের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচায়ক। তবে তা যেন মোদি সরকারের প্রচারযন্ত্র না হয়! যদি এই উদ্যোগটিকে ব্যক্তিপুজো বা দলীয় প্রোপাগান্ডায় পরিণত করা হয়, তাহলে তা ভারতের দীর্ঘ দিনের কূটনৈতিক অর্জনের উপরই আঘাত হানবে।
পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পরবর্তীতে ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ভারতের আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের সাতটি বহুদলীয় প্রতিনিধি দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে কূটনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচায়ক। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত বিশ্বের সামনে একটি ঐক্যবদ্ধ, বহুধর্মীয়, বহুজাতিগত, এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে নিজেদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে চায় এবং সেই সঙ্গে সন্ত্রাসের মদতদাতা হিসাবে পাকিস্তানের প্রকৃত ছবিটি তুলে ধরতে চায়। এই পদক্ষেপে ভারতের গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে।
বিভিন্ন ধর্ম, জাতি, ভাষা এবং রাজনৈতিক মতবাদের মানুষকে একত্রে গেঁথে একটি জাতি গঠনের যে-স্বপ্ন নিয়ে ভারত স্বাধীন হয়েছিল, এই প্রতিনিধি দলগুলির বহুত্ববাদী গঠন সেই স্বপ্নেরই এক জাগ্রত প্রকাশ। একদিকে যখন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’-কে ফের উসকে দিয়ে বলছেন যে, হিন্দু ও মুসলিম একসঙ্গে থাকতে পারে না, তখন ভারতের পক্ষ থেকে এই ঐক্যর বার্তা বিশ্বের সামনে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। যে রাষ্ট্রগুলি ভারত ও পাকিস্তানকে এখনও ‘অভিন্ন’ বলে মনে করছে, তাদের এখন এই বার্তাটি দেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে যে, পাকিস্তানের পথ বিভাজনের, আর ভারতের পথ হল সংহতির। তাছাড়া, বিদেশি রাষ্ট্রগুলির এই দৃষ্টিভঙ্গি ভাঙার জন্য ভারতের একান্ত প্রয়াস দরকার রয়েছে। বহু দশকের পরিশ্রম ও ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র এবং দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির মাধ্যমে আমরা যে ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছি, তা টিকিয়ে রাখতে হলে এখন আরও সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান দরকার।
কিন্তু এই মহান লক্ষ্যে গৃহীত উদ্যোগকে যদি দলীয় স্বার্থ বা মোদি-চরিত্রর গৌরবগাথায় পরিণত করা হয়, তাহলে তার তাৎপর্য হারিয়ে যাবে। এটা যেন বিজেপি বা মোদি সরকারের প্রচারযন্ত্রে রূপ না নেয়। এই প্রতিনিধি দলগুলি ভারতের পক্ষ থেকে কথা বলবে, মোদি সরকারের পক্ষ থেকে নয়। আমরা দেখেছি যে, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর প্রধানমন্ত্রী মোদিকে মহিমান্বিত করতে তঁার দলের নেতারা এমন সমস্ত মন্তব্য করে চলেছেন, যা মোটেই প্রত্যাশিত নয়। একে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা যেত।
এই প্রতিনিধি দল প্রেরণের সিদ্ধান্ত সাধুবাদযোগ্য হলেও, প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক, এবং বিজেপি নেতাদের বিরোধীদের ‘দেশদ্রোহী’ বলার ধারাবাহিক প্রবণতা সরকারের ঐক্যের বার্তাকে ক্ষুণ্ণ করেছে। এর বিন্দুমাত্র রেশ যেন প্রতিনিধি দল বিদেশ ভ্রমণকালে না থাকে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। এই মিশনের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ভারতের সার্বিক ভাবমূর্তি ও নীতিগত অবস্থান বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠা করা, কোনও একক রাজনৈতিক দল বা নেতার নয়। যদি এই উদ্যোগটিকে ব্যক্তিপুজো বা দলীয় প্রোপাগান্ডায় পরিণত করা হয়, তাহলে তা ভারতের দীর্ঘ দিনের কূটনৈতিক অর্জনের উপরই আঘাত হানবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.