২০০২ সাল। জম্মুতে একটা সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলা হয়। মা ফোন করে জানতে চাইলেন, আমি কোথায় আছি। এখনও মনে পড়ে ওঁর উৎকণ্ঠায় ভরা স্বর। লিখছেন মেজর ড. দ্বৈপায়ন বিশ্বাস।
আমরা যারা সীমান্তে থাকি, তারা বুঝতে পারি না বাড়ির লোকের উপর দিয়ে কী যায়! আসলে বুঝিও হয়তো। কিন্তু ওখানে থাকলে অত ভাবার সময় থাকে না। ওখানকার পরিস্থিতিই যে অন্যরকম। আজ যখন ভাবি, তখন বুঝতে পারি ২০০২ সালে আমার পরিবারের উপর দিয়ে কী গিয়েছিল! তখন আমি গুলমার্গে। সেই সময়ই জম্মুতে একটা সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলা হয়। তখন, শুধু তখনই কেন, এখনও… ফোনে আমরা লোকেশন বলতে পারি না। এদিকে খবর পেয়ে বাড়ির লোকের প্রবল টেনশন। মা তো বটেই, বাবাও। মনে পড়ে মা ফোন করে জানতে চাইলেন, আমি কোথায় আছি। এখনও মনে পড়ে ওঁর উৎকণ্ঠায় ভরা স্বর। আমি ওঁদের আশ্বস্ত করে বললাম, যেখানে জঙ্গি হানা হয়েছে আমি সেখান থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে রয়েছি। চিন্তা করার কিছু নেই।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ফের সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছিল। মায়ের সঙ্গে আলোচনাও করছিলাম। মা বলছিলেন, এখন যদি আমি সেনায় থাকতাম উনি হয় টেনশন করে মরেই যেতেন! শুনতে শুনতে বুঝতে পারছিলাম আড়াই দশক আগের সেই সময়টায় ওঁর মনের ভিতরে কী হয়েছিল।
আসলে আমাদের জীবনটাই এরকম। খুব বেশি আবেগের জায়গা থাকে না। কিন্তু বাড়ির লোক? মা? তাঁদের জায়গাটা ভালোই বুঝি। হতেই পারত, সীমান্তে থাকাকালীন কিছু একটা হয়ে গেল! ভাবি, বাড়ির লোকের উপর দিয়ে কী যেত! তবে এও সত্যি, সেনাবাহিনীতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের পরিবারের একটা মানসিক প্রস্তুতিও থাকে। তারা জানে, যখন তখন কিছু একটা হয়ে যেতে পারে! কিন্তু যতই প্রস্তুতি থাক, সন্তান সীমান্তে থাকলে মায়ের বুক তো কাঁপবেই।
মনে পড়ে মেজর পাটিলের কথা। আমার সিনিয়র ছিলেন। ডাক্তার। ওঁর বাবাও ডাক্তার ছিলেন। একমাস পরেই মেজরের রিটায়ার করার কথা ছিল। সেই সময়ই টেররিস্টরা ওঁর গাড়িটা উড়িয়ে দিল। মানুষটার শরীরের একটা টুকরোও পাওয়া যায়নি। পরিবারের উপর দিয়ে কী গিয়েছিল ভাবি। তবে শেষপর্যন্ত মানুষ মেনে নেয়। কিন্তু বুকের ভিতরে যে পাথর জমা হয় সেটা হয়তো থেকেই যায়। বিশেষত মায়ের হৃদয়। সে কি সন্তানের বিচ্ছেদ মানতে পারে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.