ছাত্রীর ছবি বিকৃত করে পর্নে ব্যবহার, রুখে দাঁড়াল সহপাঠীরা। এভাবে পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা যে পাচ্ছে নতুন প্রজন্ম, তা কি আশাপ্রদ নয়?
‘আদালত ও একটি মেয়ে’, তপন সিংহর শতবর্ষে এসেই এই ছবিটা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল হঠাৎই। পরিপার্শ্বই তা করে তুলল। সেই ছবির মূলে একটি ভয়াবহ ধর্ষণ কাণ্ডের ছায়া ছিল ঠিকই, একই সঙ্গে তা নির্দেশ করেছিল সামাজিক ট্যাবুর টানাপোড়েনও।
মহিলারা নির্যাতিতা হলে, তাদের উপর যৌন নিগ্রহ হলে দায় তাদের উপরেও চাপিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা সেদিন চিহ্নিত করেছিলেন তপন সিংহ, তা আরও প্রকট হয়ে ওঠে, যখন কোনও এমএমএস, পর্নোগ্রাফি বা বিকৃত ছবিতে ভেসে ওঠে কোনও মহিলার মুখ। অনুরাগ কাশ্যপের ‘ডেভ ডি’ ছবিতেও চন্দ্রমুখীর আদলে তৈরি চরিত্রটিকে, কেবলমাত্র একটি লিক হয়ে যাওয়া এমএমএস-এর কল্যাণে গিয়ে পৌঁছতে হয়েছিল গণিকাপল্লিতে। এই সামাজিক দেওয়াল অবশেষে কি কিছুটা হলেও ভাঙতে পেরেছে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় ঘটে যাওয়া এই আন্দোলনের জোয়ার?
আলিপুরদুয়ারের একটি স্কুলের ঘটনা তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সম্প্রতি সেখানকার একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর ছবি প্রযুক্তির অপব্যবহারে সুপার-ইম্পোজ করে পর্ন ভিডিওতে বসিয়েছিল সেই স্কুলেরই এক প্রাক্তন ছাত্র, ওই স্কুলেরই একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকে দোসর করে। ছাত্রীটির পরিণতি হতে পারত ভয়ংকর, যেমনটা এসব ক্ষেত্রে ঘটে থাকে, তার বিরুদ্ধেই থাকতে পারত মূল স্রোত। কিন্তু না, সামান্য হলেও বিচ্যুতি ধরেছে এই নীতিপুলিশি ও মূল অপরাধীকে এড়িয়ে ‘ভিক্টিম ব্লেমিং’-এর শ্যাওলাধরা প্রাচীরে। সংশ্লিষ্ট স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এগিয়ে এসেছে ছাত্রীটির পাশে দঁাড়াতে, স্কুলে ঝুলিয়েছে তালা। এতদূর গিয়েছে সেই সমর্থনের জোয়ার, বাধা এড়িয়ে সেই মেয়েটিও শামিল হতে পেরেছে এই পড়ুয়াদের অভু্যত্থানে।
দেবীপক্ষের সূচনালগ্নে দঁাড়িয়ে যখন নানাভাবে নারীশক্তিকে পৌরাণিক অনুষঙ্গে দেখা হচ্ছে, তখন রক্তমাংসের এই ঘটনাটি যেন গণজাগৃতিরই শামিল। আর জি করের ঘটনা, সব রাজনৈতিক স্তর পেরিয়ে সমাজমানসে কোথাও না কোথাও তরঙ্গ তুলতে পেরেছে। মেয়েদের লড়াই তাদের একার আর নেই, পাশে এসে দঁাড়াচ্ছে মানুষ, নাবালক-নাবালিকা থেকে নাগরিক– সকলেই। একে গণজাগৃতি ছাড়া কী বলব? কোথাও অপরাধের প্রতি আর নিষ্প্রভ আর উদাস থেকে যেতে চায় না সমাজ, এই বার্তা বার বার দিচ্ছে বিবিধ ঘটনা।
হাওড়ার এক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কয়েকদিন আগেই তাঁর পড়ুয়াদের উদ্দীপিত করেছিলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দঁাড়ানোর জন্য। সহপাঠীর পাশে দাঁড়াতে শিখছে যে প্রজন্ম, তারা কি আগামীকে আরেকটু মসৃণ, আরেকটু সুগম করে তুলবে? অন্ধকারের উৎস থেকে উৎসারিত এই আলোর প্রতি নজর থাকবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.