এমন ‘রিয়্যালিটি শো’ করা হোক, যেখানে অংশ নেবেন অভিবাসীরা, আর বিজয়ী পাবেন মার্কিন নাগরিকত্ব! জাতীয়তাবাদ প্রমাণের নব ফিকির!
যা বলিব সত্য বলিব। এই মর্মে রিয়্যালিটি শো তৈরি হলে কেমন হয়? সত্যকথনে সমস্যা কীসের– আপাতভাবে মনে হতে পারে। কিন্তু সত্য জানতে চাওয়া প্রশ্নটি যদি হয় দু’-মুখো ধারের তরোয়ালের মতো, তাহলে বিষয়টি কি আর খুব নিরীহ থাকে? যেমন, যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ‘বিয়ের পরে আপনি কি পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছেন?’ উত্তরদাতা ‘না’ বললে বিপদ কম। কিন্তু উত্তরদাতা ঠিক বলছেন কি না, তা ধরে দেওয়ার জন্য যদি থাকে ‘পলিগ্রাফ মেশিন’, মিথ্যানিরূপক যন্ত্রাদি, তাহলে? তখন ‘না’ বলা মানে এক তো প্রতিযোগিতা থেকে বহিষ্কার।
দ্বিতীয়ত, পার্টনারের কাছে ধরা পড়ে যাওয়া। ২০০৯ সালে ‘সচ কা সামনা’ বলে এমনই একটি রিয়্যালিটি শো এনেছিল স্টার প্লাস। এর ‘সেকেন্ড সিজন’ আনে ‘লাইফ ওকে’। দু’টি সিজনেই রাজীব খান্ডেলওয়াল পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। শোরগোল তুলেছিল এই শো, বিতর্কও। মার্কিন গেম শো ‘মোমেন্ট অফ ট্রুথ’-এর অনুকরণে সাজানো হয়েছিল এর ফরম্যাট। নানা ছাঁদের, নানা ধরনের রিয়্যালিটি শো আমরা অনুষ্ঠিত হতে দেখেছি। কিছু রিয়্যালিটি শো-তে প্রতিভা অন্বেষণ করা হয়। গানের, নাচের। ‘বিগ বস’-ও রিয়্যালিটি শো, যেখানে সেলেব আখ্যাপ্রাপ্ত নরনারীকে অষ্টপ্রহর গোপন ক্যামেরার সামনে থাকতে হয়। অতিখ্যাত ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ আবার প্রভাবিত ব্রিটিশ গেম শো ‘হু ওয়ান্টস টু বি আ মিলিওনেয়ার’ দ্বারা।
রিয়্যালিটি শো ভাল না মন্দ? তর্কের শেষ নেই।
প্রতিভা তুলে আনার নামে রিয়্যালিটি শো শিশু-মনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, অনেকের মত। বড়দেরও মানসিক বৈকল্য তৈরি হতে পারে। আবার অনেকে বলে, রিয়্যালিটি শো প্রান্তিক মানুষদের সুযোগ করে দেয়। ‘সা রে গা মা’ বা ‘রোডিজ’ এত নাম করেছিল যে, মফস্সলের শহর থেকে প্রতিযোগীরা ঝাঁকে-ঝাঁকে উপস্থিত হতেন অডিশন দিতে। কারও কপালে শিকে ছিঁড়ত। কারও নয়। অনেক অসফল পরের বারের জন্য তৈরি হতেন। আর, এই ধরনের রিয়্যালিটি শো সম্প্রচার করে টিভি চ্যানেল অর্জন করত, এখনও করে, অপরিসীম জনপ্রিয়তা।
তবে সম্প্রতি আমেরিকার ‘ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’-র (‘ডিএইচএস’) কাছে কানাডীয়-মার্কিন নাগরিক রব উরশপ যে রিয়্যালিটি শো-র প্রস্তাব ‘পিচ’ করেছেন, তা অভিনব। ‘ডিএইচএস’-এর প্রতি বছরই অজস্র রিয়্যালিটি শো-র প্রস্তাব আসে। তা, রব, প্রস্তাব দিয়েছেন, এমন একটি রিয়্যালিটি শো করার, যেখান অংশ নেবেন ‘ইমিগ্র্যান্ট’ বা অভিবাসীরা, আর যিনি বা যঁারা জিতবেন, তঁারা পুরস্কারস্বরূপ পাবেন মার্কিন নাগরিকত্ব। বলা বাহুল্য, ‘হ্যঁা’ বা ‘না’ কোনওটাই এখনও স্থির হয়নি। তবে ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর দেওয়া এই খবরে হইহই তো পড়েইছে। জিততে হলে প্রমাণ দিতে হবে মার্কিন সংস্কৃতি ও জীবন কতখানি জানা আছে– তার। অর্থাৎ, জাতীয়তাবাদী হওয়ার চিহ্ন রাখতে হবে। সমাজের জন্য তা মঙ্গলের?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.