প্রতীকী ছবি
সেল্ফি ইতিহাসে এই প্রথম কবর খুঁড়ে কঙ্কাল বের করে, তার পাশে পোজ্ দিয়ে, সেল্ফি তুলেছে কঁাথির এক যুবক। এ কেমন সংক্রমণ!
গা শিউরে ওঠার মতো ঘটনা। সেল্ফি-নেশা শেষ পর্যন্ত মানুষকে টেনে নিয়ে গেল কবরখানায়, কবর খুঁড়ে কঙ্কাল টেনে বের করে, বহু চেষ্টায় দঁাড় করিয়ে তার পাশে রঙিন ফুলের বাহারি প্রিন্টেড শার্ট পরে পোজ দিয়ে সেলফি তোলা। এই কীর্তি ‘সেল্ফি’-র ইতিহাসে এর আগে ঘটেছে বলে মনে হয় না। পূর্ব মেদিনীপুরের কঁাথির শ্রীরামপুর গ্রামের বছর তেইশের প্রভাকর শিট কবর থেকে কঙ্কাল তুলে তাকে পাশে নিয়ে সেল্ফি তুলে সেল্ফির ইতিহাসে হয়ে উঠল অনন্য এবং সেলেব। আমরা জানলাম তার পিতার নাম, জানলাম তারা পঁাচ ভাই। পড়শিরা তার প্রসঙ্গে বলেছেন, সে মদ ও গঁাজায় সারাক্ষণ ডুবে থাকে। যত বাড়ছে তার কুনাম, ততই বাড়ছে প্রতাপ। তার বাবা গোলক শিট নাকি এহেন ‘সেলেব’ পুত্রকে নিয়ে নাজেহাল। এই ‘কেলেঙ্কারিয়াস’ কাণ্ড কবরখানায় ঘটিয়ে পাড়ার লোকের হাতে ঠেঙানি খেয়ে প্রভাকর অাপাতত কঁাথি মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সেলফি-তোলার সংক্রামক প্রবৃত্তি সারা পৃথিবীতে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সেলফি আধুনিক সমাজ-সংসারের সবথেকে বিপজ্জনক ব্যামো বললেও বোধহয় অতু্যক্তি হবে না। সেলফি-সংক্রমণের সোচ্চার কারণ: সেলিব্রিটি হওয়ার সহজতম পথ, ঘরে-ঘরে নিজেকে পৌঁছে দেওয়ার দ্রুততম উপায়। তবে একে কীর্তির পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে– ছুটে আসা রেলগাড়ির সামনে, তিরিশতলা থেকে প্রায় ঝঁাপ দিতে-দিতে, গভীর খাদের কিনারে পা বাড়িয়ে, বাঘের মুখের সামনে হেসে সেলফি্। প্রভাকর যেটা করেছে, তাতে অবশ্যই সেল্ফি-ভাবনায় নতুন মাত্রা যুক্ত হল। ঝুঁকি কম প্রভাকরের সেল্ফিশৈলীতে। এবং হয়তো বা গঁাজা-মদের নেশার সঙ্গে মেশানো এক দার্শনিক সম্ভাবনাও খুলে যাচ্ছে প্রভাকরের এই কঙ্কাল-সেলফি ভাবনায়।
কারও-কারও মনে পড়তে পারে শেক্সপিয়রের ‘হ্যামলেট’-এ বিখ্যাত ‘গ্রেভ-ডিগার’ দৃশ্য, যে-দৃশে্য কবর খেঁাড়া হচ্ছে বেরিয়ে আসছে হ্যামলেটের বন্ধু ইওরিকের করোটি, আর সেটি হাতে নিয়ে হ্যামলেট। মঞ্চে খুলি হাতে হ্যামলেটের ভূমিকায় লরেন্স অলিভিয়ের– এই ছবি কে না দেখেছি? দস্তয়েভস্কি কঙ্কালের ছবি তোলেননি। ছবির মতো তঁার ছোটগল্প ‘বোবক’-এ কি দস্তয়েভস্কি একাধিক কঙ্কালকে তুলে এনে কথা বলাননি জীবনের পাপ-পুণ্য, অন্যায়-গ্লানি আর শোচনা সম্পর্কে।
কঙ্কালের সঙ্গে সেল্ফি আমাদের নিয়ে গেল গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের শেষ উপন্যাস ‘আনটিল অগাস্ট’-এর শেষ পর্বে, যেখানে এক নিঃসঙ্গ দ্বীপে মায়ের কবর খুঁড়ে উপন্যাসের নায়িকা বের করছে বহু বছর আগে মৃত মায়ের কিছু হাড়, যা জড়িয়ে গিয়েছে তার বর্তমান জীবনের জ্যান্ত উষ্ণতা, লিপ্সা, পাপ ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে। জীবনে ও সাহিতে্য মানুষের কঙ্কাল নিয়ে কত করুণ কিরণ ছড়িয়ে আছে! এবার কি সেলফিতেও?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.