সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পূর্ণ স্বরাজের দাবি উঠেছিল ১৯২৯ সালেই। জওহরলাল নেহরু ১৯২৯ সালের ২৬ জানুয়ারি দিনটিকে ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৩০ সাল থেকে কংগ্রেস ২৬ জানুয়ারি দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করত। কিন্তু, তাহলে হঠাৎ ১৫ আগস্ট দিনটিকেই কেন ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য বেছে নিল ইংরেজরা? বিষয়টা যখন হস্তান্তরের তখন অন্য যে কোনও দিন ক্ষমতা হস্তান্তর করা যেত। আবার কংগ্রেস যেহেতু আগে থেকেই ২৬ জানুয়ারিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে, তাই ওই দিনটিতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করা যেত। কিন্তু, সেসব না করে লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৫ আগস্ট দিনটিকেই বেছে নেন ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য। মাউন্টব্যাটেনের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে আরেক ইতিহাস। আসলে, এই ১৫ আগস্ট দিনটি মাউন্টব্যাটেনের, বলা ভাল ব্রিটেনের ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল দিন। তাই ওই দিনটিতেই ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
সালটা ১৯৪৭। গোটা ভারত তখন স্বাধীনতার দাবিতে ফুঁসছে। দেশবাসী প্রস্তুত হচ্ছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে শেষ লড়াইয়ের জন্য। ততদিনে অবশ্য ব্রিটিশরা টের পেয়ে গিয়েছিল, ভারতে তাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে। বিনা সংঘর্ষে যদি দেশত্যাগ করতে হয়, তাহলে ক্ষমতা হস্তান্তরই একমাত্র উপায়। ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালের ৪ জুলাই ব্রিটিশ হাউস অব কমনস-এ ভারতের স্বাধীনতা বিল পেশ হয়। মাউন্টব্যাটনের পাঠানো প্রস্তাবে বলা ছিল ১৯৪৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ভারত-এবং পাকিস্তানকে দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র ঘোষণা করা হবে, এবং ভারত ও পাকিস্তানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
কিন্তু, গোটা দেশে যেভাবে বিক্ষোভের পরিমাণ বাড়ছিল, তাতে মাউন্টব্যাটেন আন্দাজ করতে পারছিলেন ১৯৪৮ পর্যন্ত আর অপেক্ষা করা যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব, ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী ঐতিহাসিক মন্তব্য করেন। তিনি বলেছিলেন, ব্রিটিশরা যদি ১৯৪৮ সালের ৩০ জুনের অপেক্ষা করত, তাহলে হস্তান্তরের জন্য ব্রিটিশের হাতে কোনও ক্ষমতাই অবশিষ্ট থাকত না। ভাবগতিক বুঝে মাউন্টব্যাটনে স্বাধীনতা এগিয়ে আনেন ৪৭’-এই।
কিন্তু, কেন ১৫ আগস্টই বাছলেন মাউন্টব্যাটেন। আসলে মাউন্টব্যাটেন নিজেকে পুরো বিষয়ের প্রতিস্থাপক হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মিত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন। জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং বার্মা পুনরুদ্ধার করেন তিনি। ১৫ আগস্ট তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ করে জাপান। তিনিই জাপানের আত্মসমর্পণ চুক্তিতে সই করেন। বলা ভাল, এই দিনটি মাউন্টব্যাটেনের জীবনের অন্যতম সেরা একটা দিন। তাই এই দিনটিকেই তিনি বেছে নেন। এ প্রসঙ্গে ডমিনিক ল্যাপিয়ের ও ল্যারি কলিনসের লেখা ‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’ গ্রন্থে সুন্দর বর্ণনা রয়েছে। বইয়ের উদ্ধৃতি অনুযায়ী মাউন্টব্যাটেন বলছেন, “১৫ আগস্ট দিনটি নির্বাচন করেছিলাম হঠাৎ। আমি জানতাম আমাকে দ্রুত কোনও একটা দিন ঠিক করতে হবে। ভেবেছিলাম আগস্ট কিংবা সেপ্টেম্বরের কোনও একটা দিন। কিন্তু, আমার মুখ থেকে ১৫ আগস্ট দিনটির নামই বেরিয়ে এল। কারণ, ওই দিনটি ছিল জাপানের আত্মসমর্পণের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.