‘অন্নপূর্ণা’ মুক্তির সময় একান্ত আলাপচারিতায় অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। মুখোমুখি বিদিশা চট্টোপাধ্যায়
প্রায় কুড়ি বছর হয়ে গিয়েছে আপনার ইন্ডাস্ট্রিতে। শেষ কিছু বছর প্রচারের আলোয় কম থেকেছেন। ‘অন্নপূর্ণা’ ছবির প্রোমোশনের জন্য প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও ইভেন্ট, কেমন লাগছে?
– আসলে আমরা তো সবাই কাজ ভালোবাসি। একটা ছবি মুক্তি পাচ্ছে এতদিন পর। আমার মনে হয় কাজটাই একটা বাড়তি এনার্জি জোগায়।
যখন কেরিয়ার শুরু করেছিলেন, তখনকার মিডিয়া আর এখনকার মিডিয়ার অ্যাপ্রোচ আলাদা। অস্বস্তি হয় কথা বলতে?
– মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে একটা কারণে স্কেপটিকাল লাগে, কারণ সারাক্ষণ সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘তোমাকে কেন আরও বেশি করে ছবিতে পাওয়া যায় না’, ‘তোমার কী আক্ষেপ আছে’, ‘কেন তোমাকে টলিউড সেভাবে ব্যবহার করল না’– এই প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হতে আর ভালো লাগে না আজকাল!
‘অন্নপূর্ণা’য় আপনি একজন ঘরনি, মায়ের চরিত্রে। ছবিটা করতে রাজি হলেন কেন?
– আমার যেটা মনে হল, এই সময়ে দাঁড়িয়ে এখনও যেখানে মহিলা প্রধান গল্প কম হয়, মানে তুলনামূলক ভাবে যদি দেখো তাহলে কম হয়। আর আমার লম্বা কেরিয়ারে, আমিই বা কটা ছবি করেছি যেটা শুধু আমার চরিত্রের ওপর ফোকাস করে বা আমাকে ঘিরে! সেইখানে যদি একজন পরিচালক এবং প্রযোজক আমার ওপর ভরসা করে থাকেন, যে কেবল আমাকে ঘিরে একটা ছবি হবে তা হলে আই শুড ডু দ্যাট। এবং গল্পটা খুব প্রাসঙ্গিকও। অনেক বাবা-মা-ই আছেন যাঁরা এই ছবির সঙ্গে রিলেট করতে পারবেন। কী হয়, একটা সময়ে ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেলে নিজের নিজের জগতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে, মা-বাবাদের মনে হয় তাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে এসেছে। তাদের সময় কাটতে চায় না, কোনও অ্যাক্টিভিটি থাকে না- সেই ক্রাইসিসের সঙ্গে নিজেদের দর্শক মেলাতে পারবে বলে আমার মনে হয়েছে। আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাইকে ভাষণ দেওয়া তো আমার কাজ নয়। কেবল আমার কাজের মধ্যে দিয়ে এই সামাজিক বিষয়গুলোকে অ্যাড্রেস করতে পারি।
সাধারণত বয়স্কদের ক্ষেত্রে আমরা নানা লিমিটেশন বেঁধে দিই। বেশি বয়সে বিয়ে, প্রেম, ব্যবসা, নতুন কিছু করাকে নর্মালাইজ করতে শিখিনি। আপনি যদিও তথাকথিতভাবে সেই ‘বয়সে’ পৌঁছননি, এই চরিত্রের ক্রাইসিসের সঙ্গে নিজেকে একাত্মবোধ করলেন কী করে?
– আমরা শিল্পীরা তো খুব স্পর্শকাতর হই, তো সেই জায়গা থেকে অনেক কিছু অনুধাবন করতে পারি, অবজার্ভ করতে পারি। আমি কী কখনও এমন মানুষের কথা শুনিনি বা দেখিনি, হয়তো সজ্ঞানে মনে করতে পারছি না, কিন্তু অবচেতনে নানান অবজার্ভেশন জমা হয়ে
আছে। সেই জমা পুঁজি কখন কোনটা কাজে আসবে বলা যায় না।
এই যে বয়স্ক চরিত্রের অফার পাওয়া বা একটা বয়সের পর অভিনেতাকে তার সারাজীবনের কাজের জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়- অনেক সময়ই ঠাট্টার ছলে বলা হয় তার মানে হল সময় আক্ষরিক অর্থেই ফুরিয়ে এসেছে। এটাকে আপনি কীভাবে দ্যাখেন?
– (হাসি) ওই যে বাবা-মায়ের বয়স হয়ে গেলে যেমন ভাবতে নেই- যে তাদের এবার আর কিছু করার নেই, তারা খাবে-ঘুমোবে, আমরা দেখাশোনা করব। কারণ তারা ইচ্ছে মতো কাজ করতে পারে, ঘুরে বেড়াতে পারে, কেউ চাইলে আবার বিয়ে করতে পারে, নতুন কিছু শুরু করতে পারে। এটাও তেমনই। একজন অ্যাক্টরের বয়স হয়ে যাওয়া মানে তাকে সাইন অফ করে দেওয়া, সেটাও ঠিক নয়। তেমন কনটেন্ট তৈরি করতে পারলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আজকে যেমন শর্মিলা ঠাকুর এতদিন পর আবার ছবি করলেন। কনটেন্ট তৈরি করতে পারলে সিনিয়র অভিনেতাদের জন্য জায়গা তৈরি হবে।
বিশেষ করে ভারতীয় সিনেমা বা সিরিয়ালে ‘মা’-এর চরিত্রের স্খলন দর্শক মেনে নেয় না, মা মানেই ‘দেবতুল্য’। এটা আপনাকে বিরক্তি দেয়?
– আমার মনে হয় ঈশ্বরকে, ঈশ্বরের মতোই থাকতে দেওয়া উচিত। মানুষকে অত ঈশ্বর না বানালেই ভালো। কারণ যাকে ঈশ্বর বানানো হচ্ছে তার খুব সমস্যা। কার চোখে কখন নেমে গেলাম, পান থেকে চুন খসল তো আমার ঈশ্বর মর্যাদা খসে পড়ল– এটা অত্যন্ত হাস্যকর।
ডিভোর্সের পর বিয়ে না করলেও, আপনি নিজের মতো করে থাকেন। কখনও অ্যাডপশনের কথা ভেবেছেন?
– আমি একবার বছর পাঁচেক আগে ভেবেছিলাম, জানো। তারপর ভেবে দেখলাম যে আমাদের যে কাজের ধরন, আমি কি আমার বাচ্চাকে অতটা সময় দিতে পারব? নিজে খুব শিওর ছিলাম না। আর অ্যাডপশন বা সন্তান নেওয়ার আগে খুব শিওর না হয়ে এই পথে পা বাড়ানো উচিত নয়।
আপনি তো মমতা শংকরের অ্যাকাডেমিতে নাচ শিখেছিলেন। ওঁর সঙ্গে ‘আবহমান’-এও স্ক্রিন শেয়ার করেছেন। সে অর্থে উনি আপনার টিচার। ইদানীং সোশাল মিডিয়ায় ওঁর নানাবিধ মন্তব্য আপনাকে বিদ্ধ করে?
– আমি একটা সত্যি কথা বলি, মমতা শংকর তো আমার টিচার, এবং উনি আমার অনেক সিনিয়র এই ইন্ডাস্ট্রিতে। ওঁর সঙ্গে আমার মতামত যদি নাও মেলে আমি সেটা প্রকাশ্যে বলব না। দরকার হলে তাঁর সামনে গিয়ে তাঁকে আলাদা করে বলব, ‘যে মমদি তুমি এটা বললে, আমার এটা ঠিক লাগেনি’। কিন্তু তাঁকে কখনওই সোশাল মিডিয়াতে বা মিডিয়ার সামনে ক্রিটিসাইজ করব না।
আপনার হিন্দি ছবিতে কাজ নিয়ে খুবই উৎসাহী দর্শক। আপনার কো-অ্যাক্টর ফতিমা সানা শেখ ‘অন্নপূর্ণা’র জন্য আপনাকে উইশ করেছেন!
– এটা অসমবয়সি প্রেমের ছবি সবাই জানে। তবে স্টোরিলাইন নিয়ে নেটফ্লিক্স এখনও কিছু বলতে দেবে না। বিবেক সোনি এই ছবির পরিচালক। একটা হ্যাপি ফ্যামিলি ফিলিং আছে। এই ছবিতে আমি ফতিমার মাসির চরিত্রে। ফাতিমা খুব মিষ্টি মেয়ে আর ও খুব সিম্পল। খুব সহজভাবে মিশতে পারে। শুটিংয়ে প্রচুর সময় একসঙ্গে কাটিয়েছি। একটা বন্ডিং তৈরি হয়েছে। খুব সেল্ফলেস এই বন্ডিং। এটার মধ্যে কোনও স্বার্থপরতা নেই।
আর মাধবন! একটা সময়ের আমাদের সকলের ক্রাশ!
– মাধবনের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছি। সত্যি একটা সময়ে যে কীরকম ক্রাশ ছিল আমাদের সকলের (হাসি)! উরে বাপরে বাপ! এখন তো অবভিয়াসলি অনেক ম্যাচিওর অভিনেতা। সেটে খুব প্রফেশনাল, সুইট! সহ-অভিনেতাদের সম্মান করেন। মাধবনের মধ্যেও কোনও এয়ার আমি অন্তত দেখিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.