বাঙালির পয়লা বৈশাখ মানেই নস্ট্যালজিয়া। পোশাক থেকে খাবার, আড্ডা থেকে হালখাতা, সবেতেই থাকে বাঙালিয়ানার ছাপ। তবে আজকের বাঙালি কি ততটাই উন্মুখ থাকে নববর্ষ নিয়ে? অতীতের স্মৃতিচারণা এবং আগামী নববর্ষের পরিকল্পনা নিয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন’ ডিজিটালে লিখলেন অপরাজিত আঢ্য।
আমাদের ছেলেবেলায় কোনও কিছুতেই আড়ম্বর ছিল না। সেখানে আন্তরিকতাই ছিল আসল। পয়লা বৈশাখেও আড়ম্বরের বদলে আন্তরিকতার ছোঁয়াই বেশি থাকত। এখন তো জীবনে জাঁকজমকই বেশি। সকলেই সোশাল মিডিয়ায় সবকিছু ফলাও করে দেখায়। কিন্তু আমাদের সময় বিষয়টা তেমন ছিল না। আমি খুব অল্পে সন্তুষ্ট থাকতে ভালোবাসি। বছরের এই বিশেষ দিনে আমার কোনও বিশেষ চাহিদা থাকে না।
পয়লা বৈশাখে প্রতিবছরই যে বিশেষ কিছু করি তেমন নয়। কোনও কোনও বছর নাচের স্কুলের অনুষ্ঠান থাকে। নববর্ষ মানেই আমার কাছে লালপাড় সাদা শাড়ি, পুজো। এবছর তাই পরব। অনেক উপহার পেয়েছি, তার মধ্যে থেকেই একটা বেছে নেব। আমি নিজের জন্য কিছু কেনাকাটা করিনি। শাশুড়ি মায়ের জন্য শাড়ি, মাসি শাশুড়ির জন্য শাড়ি আর ননদের জন্য লং ফ্রক কিনেছি। বাড়ির বাচ্চাদের জন্য আগে পছন্দ করে জামা কিনতাম। কিন্তু এখন ওরা বড় হয়েছে। নিজেদের পছন্দসই পোশাক কিনে নেয়। এইবছর সকালে এক বন্ধু নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে পুজোয় যাব। বিকেলে নিজের নাচের স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা রয়েছে।
পয়লা বৈশাখে আমাদের বাড়িতে নতুন অন্ন আসে। নববর্ষে নব অন্ন কেনার রীতি রয়েছে আমাদের পরিবারে। সেই অন্ন দিয়ে পায়েস রান্না হয়। এছাড়া বছরের প্রথমদিনটায় আমাদের বাড়িতে আমিষ রান্না হয় না, নিরামিষের চল রয়েছে। তবে ছোটবেলার পয়লা বৈশাখগুলো কিন্তু এখনকার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। বলা যায় খুব মজার ছিল। তখন গরমকালে পরার সাদা সুতির অন্তত দুটো টেপফ্রক হত। তাতে আবার চেন সেলাইয়ের নানা কারুকাজ থাকত।
মনে পড়ে ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে দোকানে দোকানে হালখাতা করতে যেতাম। শরবত, মিষ্টির সঙ্গে ক্যালেন্ডার এমনকী ডায়রিও পেতাম। খুব আনন্দ করে সেইসব বাড়ি নিয়ে আসতাম। পরবর্তী সময়ে প্রতিবছর নাচের অনুষ্ঠান থাকত পয়লা বৈশাখে। কোনও কোনও বছর পয়লা বৈশাখে ঝড় বৃষ্টি হত। ঝড়ে প্যান্ডেল উড়ে গেলেও অনুষ্ঠান চলত। তার একটা আলাদাই উত্তেজনা ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনও না কোনও নৃত্যনাট্য পরিবেশন করতাম। আড়ম্বর ছিল না, তার সামর্থও ছিল না। তাই অল্পের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পেতাম। পয়লা বৈশাখ বললেই আজও এই স্মৃতিগুলো সবার আগে মনে আসে। এখন পয়লা বৈশাখে আসলে শুধু চাই আমার পরিবারের মানুষগুলো যেন আমার সঙ্গে থাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.