অভিনেতা হিসেবে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নবজন্ম যেন! নতুন ছবির সাফল্যের পর অকপট আড্ডায়। মুখোমুখি শম্পালী মৌলিক।
মুখে চওড়া হাসি, সেটা কি ‘আমার বস’-এর সাড়ার ফল?
– অবভিয়াসলি। সেটা যে কোনও অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজকের মুখে আসবে। বড় বিষয় হল, নন-হলিডে রিলিজ ছিল। খুব কঠিন সময়ে এসেছে ছবিটা। সেই পরীক্ষায় যে আমরা (নন্দিতা-শিবপ্রসাদ) উতরোতে পেরেছি সেটাই যথেষ্ট। আরেকটা বিষয় হল, মে মাসে নিজেদের রেকর্ড ধরে রাখা। সেই পরীক্ষায় যখন পাস করতে পারি সফলভাবে এবং মানুষের এত সুন্দর সাড়া আমরা পেয়েছি, ভালো লাগছে।
ছবি মুক্তির পর রাখি গুলজারের কী প্রতিক্রিয়া?
– ভীষণ খুশি। দর্শক কী বলছে, সেটা জানার ইচ্ছে যে কোনও শিল্পীর শেষ অবধি থাকে। বার বারই উনি জানতে চেয়েছেন, ‘হ্যাঁ রে, অডিয়েন্স কী বলছে রে?’ ‘ওই শেষের লুডোখেলায় কী বলছে?’ বা ‘তোকে যখন আমি বকছিলাম, ওইটা নিয়ে কী বলছে?’ এই জিনিসগুলো, একজন শিল্পী শেষদিন অবধি জানতে চান।
নন্দিতা রায় আগে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই ছবির কিছু অংশ আপনার জীবন থেকে নেওয়া। যেখানে মা এবং আপনার সম্পর্কের ঝলক উঠে এসেছে। মায়ের কি ছবি দেখার সুযোগ হয়েছে?
– না, মা পরে দেখেন। এখন তো মা হল-এ আসতে পারেন না। পরে দেখাতে হবে, তবে এই সিনেমাটা দেখানো আমার পক্ষে খুব কঠিন। তার কারণ জীবনে অন্য কাউকে তো মা বলে ডাকিনি।
‘আমার বস’-এর ‘লাড্ডু’ এগিয়ে, না ‘বহুরূপী’র বিক্রম?
– দুটো দু’ধরনের চরিত্র। অভিনেতা হিসেবে কেমন লেগেছে, সেটা দর্শক বলবে। খুব কঠিন দুটো চরিত্রই। তাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটও আলাদা। পরিবার বা আবেগের জায়গাটাও পৃথক। অনিমেষ আজকের যুগের কর্পোরেট জগতে রয়েছে। বিক্রম অনেক বেশি মাটির কাছাকাছি। বেসিক জিনিস হচ্ছে, দু’জনেরই কাছের মানুষের প্রতি আবেগের জায়গা আছে। দুটো চরিত্রে মিল এইখানে। আর কোথাও মিল নেই।
যেটা বারেবারে মনে হচ্ছে নন্দিতা রায়ের হাত ধরে অভিনেতা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নবজন্ম হচ্ছে।
– সেটা তো ‘কণ্ঠ’, ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ বা ‘হামি’, ‘রামধনু’-র থেকেও বারবার হয়েছে। ভগবানের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব যে নন্দিতা রায়ের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল। এবং ভগবান আমাকে এরকম একটা জায়গা দিয়েছে। আমি যদি শুধুই অভিনেতা হিসেবে থাকতাম কেউ কি আমাকে ‘বিক্রম’ করার সুযোগ দিত? এই ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ দিত না। কেউ ‘কণ্ঠ’ করারও সুযোগ দিত না। আরেকটা নন্দিতা-শিবপ্রসাদ তৈরি না হলে আমার মতো অভিনেতাকে জায়গা দেওয়া অসম্ভব। আমরা যখন কোনও সিনেমা বিক্রি করি, বারবারই ভাবতে হয়, স্যাটেলাইট বা ডিজিটাল বিক্রি হবে কী করে। কাউকে অসম্মান করছি না, কিন্তু একজন নায়ক বা মহানায়ককে হয়তো ওই চরিত্রে মানাচ্ছে না, কিন্তু জোর করে ফিট করাতে হচ্ছে, ওই সিনেমাটা বিক্রি করতে হবে বলে। আমি নিজেও এটার শিকার। আমি যখন প্রযোজক শিবপ্রসাদ, নিজেকে কাস্ট করতে চাই না। যে কারণে ‘বিক্রম’ হিসেবে নিজেকে কাস্ট করতে চাইনি। চেয়েছিলাম অন্য অভিনেতা হোক। নিজেকে ‘পোস্টার ফেস’ মনে করিনি কোনওদিন। এখানে হান্ড্রেড পার্সেন্ট নন্দিতা রায়ের কৃতিত্ব। এবং রাখি গুলজারের কৃতিত্ব। যাঁরা মনে করেছেন, আমি এই চরিত্রটা করতে পারি, দর্শক গ্রহণ করবে। ‘বিক্রম’-এর ক্ষেত্রেও তাই। নন্দিতা রায়ের কৃতিত্ব যিনি মনে করেছিলেন, ‘তুমি না করলে সিনেমাটা দাঁড়াবে না’।
এই যে পর পর সাফল্য পেলেন অভিনেতা শিবপ্রসাদ, সেটা কি অন্য অভিনেতাদের কাছে থ্রেট হতে পারে?
– না, না। অভিনেতা শিবপ্রসাদ নিশ্চিতভাবে ‘উইন্ডোজ’ প্রোডাকশনের বাইরে কাজ করবে না। আমি একের পর এক কাজ ছেড়েছি। সর্বভারতীয় প্ল্যাটফর্মের চারটে কাজ ছেড়ে দিয়েছি এ বছর। সেগুলো ম্যাটার করে না। আমি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি ছেড়ে দিয়েছি। সৃজিত মুখোপাধ্যায় আমাকে অনুরোধ করেছিল, তার ছবিও ছেড়েছি। একজন অভিনেতাকে প্রথমে নিজেকে ভালোবাসতে হয়। আমার কাছে ওগুলো কোনওদিন আকর্ষণ করেনি।
কেউ তো ভাবতে পারে, ‘উইন্ডোজ’-এর ছবি মানেই শিবপ্রসাদ মূল চরিত্রে অভিনয় করবেন। সমস্ত আলো সে কেড়ে নেবেন।
– যতদিন শিবপ্রসাদ ব্যবসা দেবে, ততদিন প্রযোজক শিবপ্রসাদ অভিনেতা শিবপ্রসাদকে জায়গা দেবে। আর যেদিন ব্যবসা দেবে না, জায়গা পাবে না।
‘ইচ্ছে’ থেকে ‘আমার বস’, সেই মায়ের কাছে ফেরা। অমোঘ সেন্টিমেন্ট ধরাই কি সাফল্যের চাবিকাঠি?
– আমাদের গল্পতে এই জায়গাটা বার বার ফিরেছে। এবং সেটা খুব স্বাভাবিক। আমার জীবনে মায়ের প্রভাব ভীষণ। মায়ের মতো চরিত্র আমার চারপাশটা ঘিরে রয়েছে। মাকে অনেক জায়গায় দেখতে পাই। যে কারণে ‘গোত্র’-তে ওই রকম একটি চরিত্র। বা ‘মুখার্জীদার বউ’ ছবিতে। মা আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করে। নন্দিতাদিকেও করেছে। আমার চারপাশের মানুষকে খুব ইন্সপায়ার করেছে।
‘স্টার্ট আপ’ গানে আপনার নাচ দেখে মুগ্ধ দর্শক। কিন্তু ছবিতে পাওয়া যায়নি। রকস্টারের মতো নাচ! এর পিছনে কতটা অনুশীলন?
– কোনও অনুশীলন ছিল না। স্বতঃস্ফূর্ত নাচ। নিজের মতো করেই নাচি। বাইরের লোকের সামনে করতে হবে ভাবিওনি। ওই গানের যে কোরিওগ্রাফার সে হঠাৎই বলে, ‘স্যর, আপনার একটা এন্ট্রি আছে।’ আগের দিন অনেক রাতে আমি ব্যাঙ্গালোর থেকে ফিরেছি। বলেছিলাম, পারব না। তখন সে বলে, ‘আপনি আপনার মতো এন্ট্রি করলেই হবে।’ সেটারই মানইজ্জত রেখেছি (হাসি)।
শোনা গিয়েছে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে চুমু খাওয়াতে চিত্রনাট্যকার স্ত্রী জিনিয়ার বারণ ছিল। সেটা কি অভিনেতা হিসেবে রেস্ট্রিকটেড করেছে?
– না, না, ওটা মজা। চরিত্রের প্রয়োজনে যদি দরকার পড়ে দেখা যাবে। মনে হয়নি এখানে ওইরকম দরকার আছে।
চুম্বনদৃশ্যে রাজি কি?
– চরিত্র অনুযায়ী দেখা যাবে। যখন আমি অভিনেতা, আমার ওপরে কিছু নির্ভর করে না। তখন আমি শিবপ্রসাদ না, একটা চরিত্র হিসেবে অভিনয় করবে। আমাদের সিনেমায় আগে চুম্বনদৃশ্য ছিল না এমন নয়। ‘ইচ্ছে’তেই ছিল দুটো চুম্বনদৃশ্য। ‘ইচ্ছে’ ‘ইউ’ সার্টিফিকেট পেয়েছিল। এখানে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে পিঠের ওপর যে লাইনটা লেখা হচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ- ‘যাও আজীবন অশান্তি ভোগ করো।’ ওতেই অনেক কথা বলা হয়ে গেল।
অশান্তির মধ্যে যেমন ব্যথা আছে, অন্তর্লীন প্রেমেও থেকে যায়। ছবিটা দেখলেও বোঝা যায়।
– একদম তাই। যখনই আমার আর শ্রাবন্তীর দেখা হচ্ছে, মনে হচ্ছে এত তিক্ত কেন? দু’জনেই কাছে আসতে চাইছে, কিন্তু হচ্ছে না।
অধিকাংশ দর্শকের মতে কৌশানী-শিবপ্রসাদের জুটি এগিয়ে রইল, শিবপ্রসাদ-শ্রাবন্তীর তুলনায়।
– ওটা মিষ্টি প্রেম, নম্বর বেশি পাবেই। এটা পরিণত প্রেম। ঝগড়া-মারামারি হচ্ছে তাই।
আগামী দিনে কি মূল প্রতিযোগিতা দেব বনাম শিবপ্রসাদ? দু’জনেরই বক্স অফিস সাফল্য দারুণ।
– না, না। আমার মনে হয় আমরা যারা এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি, তাদের মূল উদ্দেশ্য ইন্ডাস্ট্রির গ্রোথটা বাড়ানো। ইন্ডাস্ট্রির নাম্বার্স বাড়ানো এবং শুধু ছুটির দিনে বাড়ানোটা লক্ষ্য নয়। ‘আমার বস’ যেমন নন হলিডে-তে রিলিজ এবং কঠিন সময়ে। এইরকম পিরিয়ডে আরও ছবি নিয়ে আসা উচিত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.