নির্মল ধর: রাজ বব্বর ও নাদিরা বব্বরের কন্যা জুহি নাদিরা বব্বরের শরীরেই রয়েছে অভিনয়ের ডি এন এ। বাবা – মায়ের নাট্যদল “একজুট” এই জুহির অভিনয়ে হাতেখড়ি! সেও প্রায় বছর বিশ হতে চলল। সম্প্রতি(৫ মে) তিনি এসেছিলেন কলকাতায় তাঁর নতুন প্রযোজনা “উইথ লাভ আপ কি সইয়ারা (সিতারা)” নিয়ে। মাত্র দুটো শো হলো অনামিকা কলা সঙ্গম ট্রাস্টের উদ্যোগে। প্রথমটি ছিল কলকাতা সেন্টার অফ ক্রিয়েটিভিটির “অ্যাম্পিথিয়েটারে”, দ্বিতীয়টি বিড়লা সভাঘরে। তবে প্রায় তিন দিক খোলা মঞ্চই এই নাটকের পক্ষে সঠিক জায়গা। দর্শকের সঙ্গে আলাপচারিতাতেও মেতেছিলেন জুহি।নাটকটির বিষয় আজকের সময়ের একজন সফল লেখিকা ও মাঝবয়সী নারী – যাঁকে গত কয়েক বছর নানা সম্পর্কের (বিবাহিত, লিভ-ইন) ভিতর দিয়ে কাটাতে হয়েছে।
শেষপর্যন্ত “সইয়ারা” একাকীই থাকে। বাড়ির কাজের বীণাদি (দেবশ্রী ঘোষ), এবং সইয়ারার পি এ হরজিত (অচিন্ত্য মারওয়া) নাটকের দুটি চরিত্র হলেও, নব্বই মিনিটের আশি মিনিট মঞ্চ জুড়ে থাকেন সইয়ারা (জুহি)। তিনিই এই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র। জুহির নিজেরই লেখা নাটক। জীবনের নানা সময়ে সইয়ারার জীবনে এসেছে বিচিত্র সব পুরুষ। তাঁদের কেউ ভন্ড প্রগতিশীল, কেউ মুখে নারীর ক্ষমতা, স্বাধীনতার কথা বললেও, কাজে বাড়িতে স্ত্রীর ব্যাপারে অন্য সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও জুহি কখনও কোনও পক্ষ নেননি, কিন্তু পরোক্ষ ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন এই একবিংশ শতাব্দীতেও ভারতীয় নারীর স্বপ্ন পূরণ তো হয়নি, বরং বেড়েছে অপমান, লাঞ্ছনা! এমনকি তথাকথিত উচ্চবিত্ত সমাজেও।
জুহির রচনা একই সঙ্গে যেমন বাস্তব, তেমনি ব্যঙ্গ – বিদ্রুপের ভাষায় কোনও রাখঢাক নেই! জুহি নিজেই সব চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এমনকি তাঁর প্রাক্তন তিন স্বামী, লিভ-ইন পার্টনার সব চরিত্রেই! তাঁর ভয়েস মডিউলেশন, শরীরের প্যাটার্ন, চলা বলায় জুহি প্রতিটি চরিত্রের সূক্ষ্ম দিকগুলো উপস্থিত করেছেন। তাঁর এই নাটকে সেভাবে কোনো “নারীবাদ” এর শ্লোগান নেই, কিন্তু স্পষ্ট হয়েছে নির্যাতিতা অপমানিত নারীদের অন্তর্জ্বালা। সেটার জন্যও জুহি কৃতিত্ব দাবী করতেই পারেন। তিনদিক খোলা মঞ্চকে তিনি ভাগ করে নিয়েছেন কখনও লেখার ঘর, প্রিয় ব্যালকনি, বসার ঘর বা স্বামীর শোওয়ার ঘর হিসেবে। বাকি দুটি চরিত্রের শিল্পীদের করার মতো কিছু জায়গা ছিল না। বীণাদির চরিত্রে দেবশ্রী ঘোষ প্রথম দর্শনেই চোখ টানেন, শেষ দৃশ্যেও তিনি মালকিন সইয়ারার সঙ্গে কোথায় যেন মিলে যান, যখন জানা যায় তাঁর বিবাহিত জীবনও বিপর্যয়ে ভরা! প্রযোজনা মূল্যে এই নাটক রীতিমতো ধনী। মঞ্চসজ্জা সংক্ষিপ্ত হয়েও বিস্তৃত। মঞ্চের পেছনে পর্দা খাটিয়ে বিগত স্বামী ও বাবা মায়ের পরিচয় দেখিয়েছেন বলিউডের পরিচিত মুখ দিয়ে, এটা সমাজের প্রতি এক ধরনের শ্লেস তো বটেই! সইয়ারা এখন থাকেন একা, লেখেন নিজের কথা, চিত্রনাট্য লেখেন সিনেমার জন্য। বেশ সুখেই আছেন, কিন্তু ভেতরের যন্ত্রনায় কাতর! এটাই নাটকের মূল বিন্দু!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.