সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তেইশ সালের বক্স অফিসে ‘অ্যানিম্যাল’ ঝড় তুললেও এই ছবি নিয়ে বছর দুয়েক বাদেও চর্চার অন্ত নেই। তবে নিন্দে-সমালোচনা যতই হোক, বিতর্কের পালে হাওয়া দিয়ে ক্যাশবাক্স কিন্তু উপচে পড়ছিল সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গার! শুধু তাই নয়, রিলিজের মাত্র পনেরো দিনেই ২০২৩ সালের পাঁচ বড় ব্লকবাস্টার সিনেমার তালিকায় নিজের জায়গা করে নিয়েছিল রণবীর কাপুরের এই ছবি। আর এই সিনেমার হাত ধরেই বছর দুয়েক ধরে ভারতীয় বিনোদুনিয়ায় ‘টক্সিক পৌরুষ’, ‘আলফা মেল’ এহেন শব্দবন্ধগুলি ঘুরপাক খাচ্ছে। এবার সলমন খানের ‘সিকন্দর’ সিনেমার রগরগে সংলাপের দৌলতে ফের একবার চর্চায় রণবীর কাপুরের ‘অ্যানিম্যাল’। প্রশ্ন উঠেছে, প্রাক্তনের হয়ে প্রতিশোধ নিতে ভাইজান কি বিঁধলেন কাপুরনন্দনকে?
সলমন-রণবীরের নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হলেই কমন ফ্যাক্টর হিসেবে ক্যাটরিনা কাইফের নাম ওঠে। কারণ দুই তারকারই এক ‘প্রাক্তন’! তবে এবার প্রসঙ্গ খানিক আলাদা। সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গার দেখানো ‘পুরুষত্বের লম্ফঝম্প’ নিয়ে কম ছিছিক্কার হয়নি। এবার ‘সিকন্দর’ সিনেমায় ‘আলফা মেল’-এর নতুন সংজ্ঞা তৈরি করে সলমন খান বুঝিয়ে দিলেন আসল পুরুষত্ব কোথায়? নানাবিধ কারণে ‘সিকন্দর’ অনেকের ভালো না-ই লাগতে পারে। তবে এআর মুরুগাদোসের সিনেমায় ‘পুরুষ প্রজাতি’কে যেভাবে দেখানো হয়েছে, তাতে লজ্জা পেতে হবে ‘অ্যানিম্যাল’ কিংবা ‘কবীর সিং’কে।
‘আলফা মেল’ কে বা কী? সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই প্রশ্নটি ব্যাপকভাবে আলোচিত তথা সমালোচিত হয়েছে ভারতীয় সিনেদুনিয়ায়। কারণ প্রায়শই সমাজের প্রতিচ্ছবি সিনেমার পর্দায় ফুটে ওঠে এবং সিনেমা যে মাধ্যম হিসেবে দারুণ অস্ত্র, সেটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। একজন ব্যক্তির উচ্চস্বরে কথা বলার অভ্যেস, পারিপার্শ্বিক সবকিছুকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টা, পালঙ্ক কাঁপানো ঠুনকো অহমবোধ এবং বোতাম খোলা শার্টের অন্দর থেকে উঁকি দেওয়া লোমশ ঊর্ধ্বাঙ্গ নিয়ে সর্বোপরি ‘মর্দ কো দর্দ নহি হোতা’ গোছের হাবভাব… সত্যিই কি আসল পুরুষত্ব এসবেই সীমাবদ্ধ? হলফ করে রণবীর কাপুরের ‘অ্যানিমেল’, শহীদ কাপুরের ‘কবীর সিং’ এবং যশের ‘কেজিএফ’-এর মতো সিনেমাগুলির উপর এমন ধ্যানধারণা তৈরি করার দায় চাপানো যায়। কারণ এই ছবিগুলির হাত ধরেই ‘টক্সিক ম্যাসক্যুলিনিটি’ চায়ের ঠেক থেকে কফি কাউচে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এবার সলমনের ‘সিকন্দর’ এক নতুন সংজ্ঞার জন্ম দিল। ভারতীয় বিনোদুনিয়ায় যা বর্তমানে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কীরকম?
‘সিকন্দর’-এর গল্প চেনা ছকের। রাজকোটের রাজা সঞ্জয় রাজকোট। যে ভূমিকায় সলমন খান। প্রকৃতঅর্থেই প্রজাহিতৈষী। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই। প্রান্তিক মানুষদের জন্য সিংহের গুহায় আক্রমণ চালাতেও যিনি দু’বার ভাবেন না। তেমনই পরিবারিক সংস্কৃতি, মূল্যবোধের মাপকাঠিতে তার জুড়ি মেলা ভার! মহিলাদের অবস্থান, মান-মর্যাদার উপর আঁচড় পড়লেই গর্জন ছাড়েন। এবার আসা যাক, সিনেমার এক গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে, ঠিক যেখানে সলমন বুঝিয়ে দেন ‘আলফা মেল’ আসলে কে? ‘সিকন্দর’ ছবিতে কাজল আগরওয়াল এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তার চরিত্রের নাম বৈদেহী। তো বৈদেহীর শ্বশুরবাড়িতে শ্বশুরের অঙ্গুলিহেলন ছাড়া কোনও কাজ হয় না। পরিবারকে রীতিমতো উঠতে-বসতে শাসন করেন। তাঁর কথাই এখানে শেষ কথা। তাই বউমা বৈদেহী তো বটেই এমনকী পরিবারের সদস্যরাও ভয়ে সিঁটিয়ে থাকেন। এড়িয়ে চলেন। তবে বৈদেহীর শ্বশুরের অহমবোধে আঘাত লাগে যখন তাঁর নাতি-নাতনিরা তাঁর এহেন স্বৈরাচার অভ্যেসের অপ্রিয় সত্য়ি কথাটা বলে ফেলে। সেই প্রেক্ষিতেই ‘সঞ্জয় রাজকোট’ বেশে সলমনকে বলতে শোনা যায়, “একজন ‘আলফা মেল’ এমন কেউ নন, যিনি তাঁর পরিবারকে সর্বক্ষণ শাসনে রাখেন বা নিয়ন্ত্রণ করেন। আসল পুরুষ তিনি, যিনি পরিবারের সবাইকে বোঝেন, একসুতোয় সকলকে বেঁধে রাখেন এবং বুক দিয়ে আগলে রেখে ভালোবাসায় পরিবার চালান।” এই দৃশ্যে ভাইজানের মুখে ‘আলফা মেল’ শব্দের উল্লেখ শুনেই একাংশের অনুমান, তিনি হয়তো ‘অ্যানিম্যাল’ রণবীর কাপুরকেই বিঁধেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.