সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সত্তরতম প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে দেশের মানুষকে সংবিধান নিয়ে সচেতন করলেন শর্মিলা ঠাকুর, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি জে চেলামেশ্বর ও প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক এস ওয়াই কুরশি-সহ ৮ জন। দেশের জনগণের জন্য একটি খোলা চিঠি লিখেছেন তাঁরা। সেখানে তাঁরা লিখেছেন, দেশের সংবিধান কি এমন কোনও প্রশাসনিক বই যা দেশের নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা অপব্যবহারের সুযোগ দেয় এবং দেশের নাগরিকদের অন্যদের অবমাননা করার অধিকার দেয়? এটা কি শুধু কালি দিয়ে লেখা শব্দগুচ্ছ নাকি শহিদদের রক্তে লেখা জাত, ধর্ম, আঞ্চলিকতা, বর্ণ ও ভাষার উর্ধ্বে একটি বই?
দেশজুড়ে এখন CAA, NRC ও NPR-এর বিরোধিতায় আন্দোলন চলছে। পড়ুয়া থেকে বুদ্ধিজীবী, সব মহল থেকেই উঠছে প্রতিবাদ। এমন পরিস্থিতিতে এই ৮ জনের সংবিধান নিয়ে খোলা চিঠি এক গূঢ় বার্তা বহন করে নিঃসন্দেহে। অবশ্য কেউই CAA, NRC ও NPR-এর বিপক্ষে বা পক্ষে কোনও কথা বলেননি। তাঁরা যে চিঠি লিখেছেন তার উপরে নাম হিসেবে লেখা হয়েছে ‘৭০ ইয়ারস অফ ইন্ডিয়ান কনস্টিটিউশন- আ ডিফাইনিং মোমেন্ট’। চিঠিতে লেখা হয়েছে, ৭০ বছর হয়ে গেল দেশের সংবিধান রচিত হয়েছে। সেই সাফল্য অবশ্যই উদযাপন করতে হবে। কিন্তু তার পাশাপাশি এতদিন যেসব ভুলভ্রান্তি হয়েছে, সেগুলিও শুধরে নেওয়ার সময় এসেছে।
জনগণের কাছে তাঁদের অনুরোধ, এই সাফল্যের পাশাপাশি যেন বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের উদ্বেগ, বিশেষত বহুত্ববাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের সমস্যাগুলিও খতিয়ে দেখা হয়। আম্বেদকর ও আমাদের পূর্বপুরুষ সংবিধানে যা লিখে গিয়েছেন তা যেন পূরণ হয়, সেই আবেদন করেছেন তাঁরা।
প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি ও প্রাক্তন বিচারপতি জে চেলমেশ্বর ছাড়া এই চিঠিতে সই করেছেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর, প্রাক্তন সেনাকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরচরণজিৎ সিং পানাগ, চলচ্চিত্র পরিচালক আদুর গোপালকৃষ্ণান, কর্ণাটকের বাদ্যশিল্পী টিএম কৃষ্ণ, ইউজিসি এবং আইসিএসএসআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুখদেও থোরাট এবং পরিকল্পনা আয়োগের প্রাক্তন সদস্য সইদা হামিদ। এই খোলা চিঠি প্রকাশ্যে আসার ঠিক এক বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর সরব হয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের চারজন বিচারপতি। চেলমেশ্বর সেই চারজনের মধ্যেই ছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে চলছে, এতে দেশের বিচারব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এভাবে চললে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। সোমবার এই ৮ জনের খোলা চিঠি সেই ঘটনাকে আরও একবার মনে করিয়ে দিল।
১০ জানুয়ারি দেশজুড়ে কার্যকর হয়েছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। আইন অনুযায়ী, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা যদি ধর্মীয় কারণে দেশ ছেড়ে আসেন, তাহলে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কারণ শাসকদল বিজেপির মতে, ধর্মীয় কারণে সমস্যার মুখোমুখি হয়ে ও কার্যত নিরুপায় হয়েই তাঁরা দেশ ছাড়েন। সেই কারণেই CAA নিয়ে জোর দিচ্ছে সরকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.