ছবি ফেসবুক
অভিরূপ দাস: “বাংলা ছবি দেখার বদভ্যেস নেই বোধহয়?” ঠোঁটের কোণে সিগারেট ঝুলিয়ে তাঁকে প্রশ্ন ছুড়েছিলেন উত্তম কুমার। ১৯৬৬-র কালজয়ী সিনেমা ‘নায়ক’ মুক্তি পাওয়ার পর কেটে গিয়েছে ৫৯ বছর। শর্মিলা ঠাকুর বোঝালেন, উত্তম কুমারকে বড় পর্দায় দেখতে চাওয়ার ‘বদভ্যেস’ বদলায়নি তাঁর। নতুন করে মুক্তি পেয়েছে সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’। খবর পেয়েই দিল্লিতে মাল্টিপ্লেক্সে চলে গিয়েছিলেন শর্মিলা।
“উফফ। কী যে ভালো লাগল!” ‘নায়ক নস্টালজিয়া’ এখনও তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় তাঁকে। ধাতব সোনালি রঙের শাড়ি। দুধে আলতা গালে হাসলেই গভীর টোল। মাথার চুলের রঙে অভিজ্ঞতার ছাপ। চোদ্দো বছরের ‘বনবাস’ কাটিয়ে ফের বাংলা সিনেমায় শর্মিলা ঠাকুর। শুক্রবারের সাঁঝবেলায় শহরের এক রেস্তরাঁয় হাজির হয়েছিলেন নিজের নতুন ছবি মুক্তির আগে। সঙ্গে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, নায়ক ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, পরিচালক সুমন ঘোষ। গল্পের ছলে বোঝালেন কেন বয়স বাড়লে এখনও তিনি ট্রেন্ডিং। বিনোদনের নতুন সংজ্ঞা ওটিটি। শর্মিলা নিজেও অবসরে চোখ রাখেন ছোটপর্দায়। ‘নায়ক’য়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন, “মানিকবাবুর সিনেমা তো এখন ওটিটিতেই দেখি। বড় পর্দায় নায়ক রিলিজ করেছে শুনেই চলে গিয়েছিলাম। এক একটা দৃশ্য অসাধারণ লাগল। সেই প্ল্যাটফর্মে লোক দাঁড়িয়ে। আমি আর উত্তমবাবু ট্রেনের ভিতরে গল্প করছি।”
‘নায়ক’এ বাঙালির প্রিয় জুটি শর্মিলারও যে ভীষণ কাছের। পাঁচ দশক পরে কেমন লাগল মহানায়ককে? “উত্তমবাবুর অভিনয় অসাধারণ। ছোট্ট রোলে সুমিতা সান্যালও দারুণ।” আর নায়কের নায়িকা? “আমার নিজেকেও উত্তমবাবুর বিপরীতে বেশ লাগল।” শর্মিলার কথায়, তখন দেখে মনে হয়েছিল না জানি কেমন কাজ করেছি। এখন দেখলাম দিব্যি কাজ হয়েছিল।”
তেষট্টিতে মুক্তি পেয়েছিল উত্তম-শর্মিলার ‘শেষ অঙ্ক।’ শর্মিলার ইচ্ছে, “হরিদাস ভট্টাচার্যের পরিচালনায় সে সিনেমা আবার রিমেক হোক।” মহানায়কের শহরে এসে শর্মিলার আক্ষেপ, ” শেষ অঙ্কে উত্তমবাবুর যে রোলটা ছিল, অসাধারণ। আমি জানি না যে কেন এতদিনেও ছবিটার রিমেক হল না? ওটা কিন্তু একটা দারুণ পার্ট।”
কলকাতা তাঁর সেকেন্ড হোম? নাকি প্রথম পছন্দ? দক্ষিণ কলকাতার হিন্দুস্তান পার্কে থাকতেন শর্মিলারা। এখন পাকাপাকিভাবে দিল্লির বাসিন্দা। পদ্মভূষণ অভিনেত্রী জানিয়েছেন, “এ শহরে আমার অনেক বছর কেটেছে। রয়েছে অজস্র বন্ধু-বান্ধব। কলকাতার সব কিছু আমার ভালো লাগে।” কলকাতাকে মিস করলেই তাই ছুটে চলে আসেন শর্মিলা। কী ভালো লাগে নায়িকার? ঠোঁটের গোড়ায় লেগে থাকা উত্তরে শর্মিলা জানিয়েছেন, “কলকাতার কাঠি কাবাব।”
গুঞ্জন রটেছে, আর ছবি করবেন না সত্যজিৎ রায়ের আবিষ্কার। যাঁকে প্রথম হিন্দি ছবিতে সুযোগ দিয়েছিলেন আরেক বাঙালি পরিচালক, শক্তি সামন্ত। শর্মিলা জানিয়েছেন, “আমি ছবি করতে চাই। কিন্তু শরীরে কুলোচ্ছে না। আসলে অভিনয় করতে শারীরিক ফিটনেস দরকার। আজকাল এত ভুগছি। ভয় লাগে।”
তবু ফের তাঁকে আরও একটা বাংলা ছবিতে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। শর্মিলার কথায়, “নিজের ভাষায় কাজ করার একটা আলাদা আনন্দ আছে। একটা পরিপূর্ণতার আবেশ। বাংলায় চট করে অনেক সংলাপ বলা যায়।”
নতুন ছবি পুরাতনে প্রথমবার নিজের গলায় গান গেয়েছেন শর্মিলা। এদিন তা নিয়েও শুনিয়েছেন মজার গল্প। ভৌগোলিকভাবে পতৌদি প্যালেস এমন জায়গায়, ছাদের উপর দিয়ে বারবার প্লেন উড়ে যায়। রেকর্ড করতে গিয়ে প্লেনের আওয়াজ চলে এসেছে অনেকবার। বাধ্য হয়েই গান রেকর্ড করে একাধিকবার পাঠাতে হয়েছিল পরিচালককে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.