সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: খ্যাতনামা বাংলাদেশি পরিচালক মোস্তাফা সরওয়ার ফারুকির ‘ডুব’ ছবিতে ইরফান খানের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন পার্ণো মিত্র। সহ-অভিনেতার মৃত্যুতে ফের একবার স্মৃতির সরণিতে হাঁটলেন টলিউড অভিনেত্রী। ‘ডুব’ দিলেন ইরফান-স্মৃতিতে।
“এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে ভাবতে পারিনি। অসুস্থ জানতাম, কিন্তু তা বলে এত তাড়াতাড়ি! ইরফান এমন একজন অভিনেতা যে তাঁর কাজ দিয়ে আমাদের জীবন স্পর্শ করতে পেরেছিল। আমি ‘ডুব’ ছবিতে ওঁর সঙ্গে কাজ করার সুবাদে ওঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। কী সহজে জলের মত অভিনয় করতেন। মুগ্ধ হয়ে ওঁর শট দেওয়া দেখতাম। ভীষণ চিল্ড আউট মানুষ ছিলেন। কোনও এয়ার নেই। সেসময়ে মাটিতে একসঙ্গে বসে খেয়েছিও। ক্রিকেট ভালোবাসতেন। শুটিং থামিয়ে, ক্রিকেট খেলায় ফিল্ডিং করতে হয়েছে কতবার! যাঁরা অভিনয় ভালোবাসেন তাঁরা সকলেই ইরফান খানের কাজের প্রতি আসক্ত। চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার ইরফান খান।”
ইরফান খানের সঙ্গে আর কাজ করা হল না! আক্ষেপ পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের। ‘রাজকাহিনী’র মতো ‘হেমলক সোসাইটি’ও হিন্দিতে করতে চেয়েছিলেন সৃজিত। ইচ্ছে ছিল, ‘হেমলক সোসাইটি’তে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় আনন্দ কর নামে যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন, ঠিক সেই চরিত্রের জন্যেই ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার এই অন্যতম দক্ষ প্রাক্তনীকে চেয়েছিলেন সৃজিত। ইরফানের সঙ্গে এপ্রসঙ্গে বহুবার ব্যক্তিগতভাবে কথাও বলেছেন। কিন্তু সেই ইচ্ছে আর পূরণ হল না পরিচালকের। বুধবার সকালে অভিনেতার প্রয়াণের খবর পেতেই শোক জ্ঞাপন করেছেন তিনি।
“যেমন আমার মৃত্যুর আগে নাসিরুদ্দিন শাহ, অমিতাভ বচ্চন আর আশা ভোঁসলের সঙ্গে কাজের ইচ্ছেপূরণ হয়েছে। ঠিক তেমনই ঋতুদার (ঋতুপর্ণ ঘোষ) সহকারী হিসেবে কাজ করার বাসনা অপূর্ণ থাকার পাশাপাশি ইরফান খানের সঙ্গেও কাজ করা হল না!বহুবার মিটিং হয়েছিল ‘হেমলক সোসাইটি’র হিন্দি ভার্সন নিয়ে। কিন্তু ‘আনন্দ করে’র সঙ্গে ‘আনন্দ করা’ আর হল না! ‘আংরেজি মিডিয়াম’ মুক্তি পাওয়ার আগে জীবন যোদ্ধা হিসেবে যে বার্তা দিয়েছিলেন ইরফান, মনে রাখব সেটা।”
অপূরণীয় ক্ষতির কথা শোনা গেল অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর কণ্ঠেও। বললেন, জানি অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু এভাবে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন বুঝতে পারিনি। অনেক বড় ভক্ত আমি ওঁর। শুধু ভারতীয় সিনেমা নয়, বরং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রেও উনি পদচিহ্ন রেখে গিয়েছেন। কত বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন, সেটা বোধহয় নিজেও কোনও দিন বুঝতে পারেননি। প্রকৃত অর্থে যোদ্ধা ইরফান। আর সেই যুদ্ধ করতে করতেই চলে গেলেন উনি। ‘এক ডক্টর কি মৌত’- দিয়ে শুরু করে এত ছোট জায়গা থেকে অত বড় জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিলেন, সেটা দেখার মতো। ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম ওঁকে। অনেকসময়ই কাজ নিয়ে আলোচনা করেছি। ভারতীয় সিনেমাকে যে জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলেন ওঁর কাজের মাধ্যমে, সেটা কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গিয়ে বুঝেছিলাম যখন ‘লাঞ্চবক্স’ ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছিল আন্তর্জাতিক সিনে ময়দানে। সেখানে ওঁর কাছ থেকেই শিখেছিলাম একটা ছবিকে আন্তর্জাতিক ময়দানে কীভাবে নিয়ে যেতে হয়। আমাদের চলচ্চিত্র জগতের অপূরণীয় ক্ষতি। ইরফান চিরকাল আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে। ওঁর পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.