সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নিঃশব্দেই চলে গেলেন টলিউডের অন্যতম সেরা চিত্রগ্রাহক বৈদ্যনাথ বসাক। বৃহস্পতিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বার্ধক্যজনিত কারণেই প্রয়াত হন বৈদ্যনাথবাবু। রাজ কাপুর থেকে উত্তমকুমার, সিনেমা জগতের তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর শেষ জীবন কেটেছিল অত্যন্ত দুঃখে। একসময় দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করার জন্য সকাল-বিকেল তিনি আসতেন রামকৃষ্ণ মিশনের দরজায়।
২০১৮ সালে খবরে আসেন বৈদ্যনাথ বসাক। তখনই জানা যায় তাঁর দুর্দশার কথা। কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পর ক্রমশ দৈনদশার নাগপাশে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন এই বিখ্যাত চিত্রগ্রাহক। ঠিকমতো খাবার জুট না তাঁর। একটু ভাতের জন্য প্রতিদিন চার কিলোমিটার পায়ে হেঁটে যেতেন রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনে। দরিদ্রভোজনে বসে খেতেন। শরীর তাঁর এমনই ভেঙে গিয়েছিল যে তাঁকে কেউ চিনতেও পারত না। খাওয়া শেষে একটু বিশ্রাম নিয়ে ফের বাড়ির দিকে রওনা দিতেন। স্বর্ণযুগের বিখ্যাত এই চিত্রগ্রাহকের এমন দুর্দশার কথা শুনে এগিয়ে এসেছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, মাধবী মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীরা। প্রত্যেকেই তাঁকে সাহায্য করেন।
উত্তমকুমারের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন বৈদ্যনাথবাবু। মহানায়কের ৭২টি ছবিতে চিত্রগ্রহণের কাজ করেন তিনি। তার মধ্যে ছিল ‘অগ্নি পরীক্ষা’, ‘সাগরিকা’র মতো বিখ্যাত ছবি। রাজ কাপুরের সঙ্গেও কাজের অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। রাজ কাপুরের ‘বুট পলিশ’ ছবিতে কাজ করেন তিনি। কথা ছিল ‘শ্রী ৪২০’ ছবিতেও তিনিই চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করবেন। কিন্তু তা আর হয়নি। এমনকী নেপালের রাজপরিবারের চিত্রগ্রাহকও ছিলেন তিনি। নেপালের রাজা মহেন্দ্র তাঁকে সেখানেই থাকার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কলকাতাকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেও পারেননি বৈদ্যনাথবাবু। ফিরে আসেন তিনি। বসাকের শেষ কাজ ছিল ২০১৮ সালের ছবি ‘পাড়’। রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত এই ছবিতেই শেষ ক্যামেরা ধরেন তিনি। তারপর দু’বছর লেন্সের মুখ দেখেননি। শেষ জীবনে ছেলের সংসারেই ঠাঁই হয়েছিল বিপত্নীক বৈদ্যনাথবাবুর। ছেলে সঞ্জয় একটি ডেকরেটার্সের দোকানে মাসমাইনের কর্মচারী। সব মিলিয়ে অভাবের সংসার। তার মধ্যেই দিনাতিপাত করতেন তিনি। বৃহস্পতিবার সংসারের মায়া কাটিয়ে স্ত্রীর কাছেই চলে গেলেন স্বর্ণযুগের অন্যতম সেরা চিত্রগ্রাহক বৈদ্যনাথ বসাক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.