সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বছর খানেক ধরেই বলিউডের খান সাম্রাজ্যের মন্দা বাজার। তেইশ সাল থেকে অবশ্য শাহরুখ খানের কপাল ফিরেছে। তবে বক্স অফিসের অঙ্কে আমির-সলমন অনেকটাই পিছিয়ে। কাপুরদের দাপটও সেভাবে দেখা যাচ্ছে না! দক্ষিণী সিনেইন্ডাস্ট্রির ব্যবসার নীরিখে বলিউডের ক্যাশবাক্সের ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ হাল। উপরন্তু সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সিকন্দর’-এর আয়ের অঙ্ক বিনোদুনিয়ার অন্দরে মারাত্মক একটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সেটা হল, স্টারডমে ভর করেও কেন তারকাখচিত বলিউড সিনেমাগুলি মুখ থুবড়ে পড়ছে? মুম্বইয়ের ‘ওয়েভস সামিটে’ শামিল হয়ে কারণ ব্যাখ্যা করলেন খান সাম্রাজ্যের দুই প্রতিনিধি শাহরুখ এবং আমির।
বিগ বাজেট, তারকাখচিত সিনেমার সম্ভার থাকতেও বলিউড কেন ধুঁকছে? এপ্রসঙ্গে শাহরুখের মন্তব্য, “আমার একটাই দাবি, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছোটখাট শহরগুলিতে প্রেক্ষাগৃহ আরও বাড়ানো হোক। মানুষের কাছে সিনেমাহল যাতে সহজলভ্য হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। টিকিটের দাম আরও সস্তা করতে হবে, যাতে সবধরণের মানুষ হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে পান। সেটা যে কোনও ভাষায় হতে পারে। আর হলের সংখ্যা বাড়লে ভারতের একটা বৃহত্তর সংখ্যক দর্শকের কাছে সিনেমাগুলো পৌঁছে যাবে। এছাড়াও, বর্তমানে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখা খুব ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। আর বেশিরভাগ ভালো সিনেমাহল দেশের বড় বড় শহরেই কেন্দ্রীভূত। এক্ষেত্রে আমরা ‘চিনের মডেল’-এর অনুসরণ করতে পারি। সেই মডেল ফলো করে আমাদের দেশেও হলের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। এতে দর্শকসংখ্যাও বাড়বে। আরেকটি সুবিধে হবে, এক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি কোণায় কম খরচায় আরও বেশি সংখ্যক দর্শকদের সিনেমা দেখাতে পারব আমরা।”
WAVES সম্মেলনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলিউড বাদশার সংযোজন, “মাননীয় খুব ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। নইলে তো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির লোকজন কাঁদতে থাকে যে ‘আমদের ইন্ডাস্ট্রি কবে শিল্পের তকমা পাবে?’ এই বলে। বর্তমানে সিনেমা তৈরি করার কাজটাও খুব কঠিন হয়ে উঠেছে। বিনোদনের জন্য অন্যান্য এত প্ল্যাটফর্ম হয়ে গিয়েছে যে, মনোরঞ্জনের জন্য মানুষকে সিনেমা হলে টেনে নিয়ে যাওয়াটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশ সংস্কৃতি সমৃদ্ধ, এখানে ফিল্ম মেকিংয়ের ইনফ্রাস্ট্রাকচার আরও উন্নত করা জরুরী।” শাহরুখের সুরেই আমির খান বললেন, “ভারতে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার। দেশের এমন অনেক জেলা, গ্রাম রয়েছে, যেখানে একটা হল নেই। বিগত কয়েক দশক ধরেই আমরা এই সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমার মতে, আমাদের প্রেক্ষাগৃহের উপর বেশি করে বিনিয়োগ করা উচিত।”
আমিরের সংযোজন, “সিনেমা হলের সংখ্যার দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের থেকে অনেকটা পিছিয়ে ভারত। দেশের ভৌগোলিক আয়তন এবং কোঙ্কন অঞ্চল সহ কিছু অঞ্চলেনাগরিকের সংখ্যার অনুপাতে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা তেমন নেই। যদি খুব ভুল না করি আমাদের দেশে মোটে প্রায় ১০ হাজার সিনেপর্দা আছে। ভারতের এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, তবুও ওদের দেশে ৪০ হাজার থিয়েটার রয়েছে। আর চিন এক্ষেত্রে ৯০ হাজার প্রেক্ষাগৃহ নিয়ে লিস্টের অনেকটা উপরে। তবে আমাদের দেশে সিনেশিল্পের ভালো ভবিষ্যৎ রয়েছে। তবে এই স্বপ্ন তখনই বাস্তবায়িত হবে যখন দেশে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা বাড়বে। নইলে সব স্তরের দর্শকদের কাছে সিনেমাগুলি পৌঁছে দেওয়া যাবে না।” কেন দক্ষিণী সিনে ইন্ডাস্ট্রির তুলনায় বলিউড পিছিয়ে? আমিরের ব্যাখ্যা, “ভারতের এই ১০ হাজার সিনেমা হলের অর্ধেক রয়েছে দক্ষিণী রাজ্যগুলিতে। আর বাদ বাকি গোটা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। তাই তুলনা টানলে দেখা যাবে, বলিউড সিনেমার জন্য মোটে ৫ হাজার স্ত্রিন বরাদ্দ। আমাদের সিনেপ্রেমী দেশে শুধু বড় হিট সিনেমা দেখতেই মানুষ হলে যান, বাকি ৯৮ শতংশ কোথায় সিনেমা দেখবে?”
মিস্টার পারফেকশনিস্টের সংযোজন, “কোঙ্কন অঞ্চল সহ আরও বেশ কিছু জায়গায় কোনও প্রেক্ষাগৃহ নেই। এখানকার মানুষেরা হয়তো নেটে সিনেমার নাম শোনে, সিনেমা নিয়ে আড্ডা দেয় কিন্তু হল না থাকায় দেখবে কোথায়? এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক! তাই সবথেকে আগে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে আমাদের।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.