সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সিনেমা বানানো তাঁর স্বপ্ন ছিল। তাই সব ছেড়ে সেলুলয়ডে নিজের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের অরণ্য পলাশ। কিন্তু সহায় হয়নি ভাগ্য। বহু বছর আগে তৈরি হওয়া ছবি আজও মুক্তি পায়নি। পেট চালাতে আজ তাই রেস্তরাঁয় বেয়ারার কাজ করতে হয় চিত্রপরিচালক পলাশকে।
বছর খানেক আগে অরণ্য পলাশ বানিয়েছিলেন ‘গন্তব্য’। ছবিতে ছিলেন ফিরদৌস, আইরিন, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতারা। ছবি বানাতে গিয়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন তিনি। ছবি তৈরি করতে খরচ পড়েছিল প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা। প্রথমদিকে প্রযোজক পেলেও পরে তিনি সরে যান। ফলে প্রযোজনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন পলাশ। ছবি তৈরির টাকা জোগাড় করতে জমি, বাড়ি, বাবার পেনশনের টাকা খরচ করেছিলেন। এমনকী স্ত্রীর গয়নাও বন্ধক রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু সেগুলো আর ছাড়াতে পারেননি। মাথায় এখন প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার বোঝা।
ছবি বিক্রির চেষ্টা যে পলাশ একেবারে করেননি, তা নয়। ইমপ্রেস টেলিফিল্মসের কাছে একবার বিক্রির চেষ্টা করেছিলেন ‘গন্তব্য’। প্রথমে ১০ লক্ষ টাকার চুক্তি হয়। তারপর ৭ লক্ষ টাকা দিতে রাজি হয় সংস্থা। কিন্তু তাতেও শিকে ছেঁড়েনি। শেষ পর্যন্ত সংস্থা জানায়, ৩ লক্ষ টাকায় ছবির কপিরাইট আর ১ লক্ষ টাকায় অনলাইন স্বত্ব কিনবে তারা। কিন্তু এত কম টাকায় ছবি বিক্রি করা সম্ভব নয়। তা তিনি করেননি। ছবি বিক্রি না পেরে দেউলিয়া হয়ে যান। বাড়িতে তখন হাঁড়ি চড়ত না। ক্রমশ পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু হয় পলাশের। এক সময় তাঁকে আত্মীয়রা ছেড়ে চলে যায়। স্ত্রীর সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ হতে হতে একেবারে মুছে যায়। পলাশকে ছেড়ে যান তিনিও। পেট চালানোর তাগিদে তখন দরজায় দরজায় চাকরির জন্য ধরনা দিতেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত চাকরি মেলে এক রেস্তরাঁয়। ওয়েটারের কাজ পান তিনি। একসময়ের চিত্রপরিচালক এখন ভাগ্যতাড়িত ওয়েটার। দিনে ২৫০ টাকা আয় হয় তাঁর। তিন বেলা রেস্তরাঁতেই খান। দিন দিন ঋণের বোঝা মাথায় চেপে বসেছে। কিন্তু কীভাবে সেই সব শোধ হবে, তা জানেন না অরণ্য পলাশ। কিন্তু আশা ছাড়েননি তিনি। জানান, দেশাত্মবোধ থেকে তিনি ছবিটি বানিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের স্বপ্ন চোখের সামনে ধূলিসাৎ হতে দেখেও কিছু করতে পারছেন না তিনি। ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকা ছাড়া কোনও উপায় নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.