স্টাফ রিপোর্টার: রবিবার দুপুর তিনটে চল্লিশে নিজের বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন শাঁওলি মিত্র (Shaoli Mitra)। বাংলার নাট্যজগতের অনন্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগে লিখে রেখে যাওয়া ‘ইচ্ছাপত্র’ অনুযায়ীই তাঁর অসুস্থতা ও মৃত্যুসংবাদ আগে জানানো হয়নি। সিরিটি শ্মশানে তাঁর অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন করেন তাঁর মানসকন্যা অর্পিতা ঘোষ ও পুত্র সায়ক চক্রবর্তী। “শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলতে শিখিয়েছিলেন”, মাতৃসম নাট্যশিল্পীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে একথাই বলেন অর্পিতা ঘোষ (Arpita Ghosh)।
“আমি যে অসুস্থতা ভোগ করছি, তাতে যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাতে আমি খুশি। মৃত্যুর পর এই শরীরটিকে প্রদর্শন করায় আমার সংকোচ রয়েছে। সাধারণের অগোচরে শেষকৃত্য হোক।” একথাই ইচ্ছাপত্রে লিখেছিলেন শাঁওলি মিত্র। তাঁর সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়েছে। অর্পিতা ঘোষ বলেন, ‘‘মৃত্যুর পর ওঁর ইচ্ছাপূরণে যাতে আমরা বিপদে না পড়ি, তার জন্যই এই ইচ্ছাপত্র উনি তৈরি করেছিলেন। শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলতে শিখিয়েছিলেন।’’
দেবেশ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন শাঁওলি মিত্রর (Shaoli Mitra) শেষ যাত্রায়। তাঁর কথায়, ‘‘দিদি চেয়েছিলেন আমি ওঁকে শেষ মুহূর্তে ছুঁয়ে থাকি। তাই এটা সম্ভব হল।”
“ক্লাস করে নয়, তাঁর অভিনয় দেখে আমরা অভিনয় শিখেছি। তাঁর অভিনয় দেখেই বুঝেছি অভিনয় কাকে বলে, অভিনয়ের মধ্য দিয়ে কীভাবে মানুষের কাছাকাছি পৌঁছনো যায়”, বলেন দেবশংকর হালদার। নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘বয়সে ছোট হলেও ওঁর কাজের সুবাদে আমাদের সবার শ্রদ্ধা আদায় করে নিয়েছিল।’’
বাবা শম্ভু মিত্র ও মা তৃপ্তি মিত্রর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই একের পর এক নাটক দর্শকদের উপহার দিয়ে গিয়েছেন শাঁওলি মিত্র। ‘ডাকঘর’, ‘পুতুলখেলা’, ‘বিতত বিতংস’, ‘একটি রাজনৈতিক হত্যা’, ‘পাগলা ঘোড়া’-র মতো নাটকে তাঁর অভিনয় রীতিমতো সাড়া জাগিয়েছিল। ‘নাথবতী অনাথবৎ’ ও ‘কথা অমৃতসমান’-এর একক অভিনয় কালজয়ী। ‘নাথবতী অনাথবৎ’-টানা ১০০ দিন হাউসফুল ছিল।
মা মাটি মানুষের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১২ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অকাদেমির সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন শাঁওলি মিত্র। পরবর্তী সময়ে শারীরিক অসুস্থতার জন্যেই আকাদেমির কাজ থেকে অব্যাহতি চান তিনি। তাঁর ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৩ সালে সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন শাঁওলি (Shaoli Mitra)। ২০০৯ সালে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হন। শিল্পীর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আগে জানতাম না। শাঁওলিদির ইচ্ছাক্রমে তাঁর প্রয়াণের খবর আমাকে শেষকৃত্যের পর জানানো হয়। তিনি আমার বহুদিনের সহযোগী ছিলেন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনে তিনি আমার সঙ্গে ছিলেন। রেলমন্ত্রী থাকার সময় তিনি আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। পরে আমরা দায়িত্বে এলে তিনি বাংলা অকাদেমির সভাপতি হন এবং দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করেন। আমার বহুদিনের সহকর্মী ও সুহৃদ হিসাবে তিনি আমাদের মনের মণিকোঠায় থেকে যাবেন।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.