ছবি: ব্রতীন কুণ্ডু
বিশ্বদীপ দে: শীতের শহরে হাতে সময় থাকলে কোথায় হবে আপনার ডেস্টিনেশন? চিড়িয়াখানা থেকে সায়েন্স সিটি, বিড়লা তারামণ্ডল থেকে জোড়াসাঁকো- যাওয়ার জায়গার অভাব নেই। কিন্তু তিনদিনের জন্য শহর যে চলে গিয়েছে সুপারহিরোদের দখলে! শুক্রবারে শুরু হয়ে রবিবার শেষ হবে কলকাতা কমিক্স কার্নিভ্যাল। আপাতত তাই বাকি সব জায়গা নয়, এটাই শহরের নতুন গন্তব্য। মার্ভেল থেকে ডিসি, পুরনো ইন্দ্রজাল কমিক্স হাজির সব্বাই। বই থেকে আর্টওয়ার্ক, পোস্টার, স্টিকার… কী নেই? তাই সপ্তাহান্তে কমিক্স উৎসবে আট থেকে আশি, সকলের জন্যই রয়েছে কিছু না কিছু।
কিন্তু শনিবাসরীয় দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল এক অসাধারণ কস প্লে প্রতিযোগিতা। সোজা কথায় বললে, কমিক্সের কোনও চরিত্র সেজে মিনিট কয়েক পারফর্ম করা! সঙ্গে উপযুক্ত আবহসঙ্গীত। চারপাশে ভিড় করে দর্শক, যাঁদের প্রায় অধিকাংশই তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি। হাততালি, সিটি, উল্লাসে সত্যিই যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছিল ‘সুপার’ সব চরিত্ররা। প্রাচীন মিশরের চন্দ্র দেবতা খনসু থেকে বার্বি ডল- একে একে মঞ্চ আলো করল অনেকেই। রবিবার দুপুরেও হবে এই প্রতিযোগিতা, সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে জানালেন অন্যতম উদ্যোক্তা সুপর্ণ সরকার।
এই কার্নিভ্যালের মূল উদ্যোক্তা শুভময় কুণ্ডু জানালেন, বছর পাঁচেক আগে যখন শুরু করেছিলেন এই কার্নিভ্যাল আইডিয়া ছিল না কতটা সাড়া পাবেন। ”এই শহরে এত কমিক্সপ্রেমী আছেন, জানাই হত না এটা আয়োজন না করলে।” আগামী দিনে তরুণ কমিক্সপ্রেমীদের একজোট করে তাঁদের ভিতর থেকেই কমিক্স শিল্পী তৈরি করতে চান বলেও জানালেন। সেই সঙ্গে এই কার্নিভ্যাল কলেবরে আরও বাড়ুক, সেটাও প্রার্থনা শুভময়ের। কিন্তু আধুনিক প্রজন্ম কি বই পড়ে? তাদের কাছে সুপারহিরো মানেই তো পর্দায় নড়াচড়া করা! শুভময় বলছিলেন, ”তা নয়। কার্নিভ্যাল শুরুর পর দেখেছি একদম ইয়ং জেনারেশনের কমিক্স বুকের প্রতিও ইন্টারেস্ট বাড়ছে।”
কথা হচ্ছিল দীপক সিংয়ের সঙ্গে। সপরিবারে এই কার্নিভ্যালে থাকেন তাঁরা। হাতে তৈরি অরণ্যদেব থেকে জোকারের পুতুল, স্টিকার, পোস্টারের পসরা সাজান। কিন্তু এবার তাঁর স্টলের সেরা চমক বাঙালির রক্তমাংসের এক সুপারহিরো সত্যজিৎ রায়। ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রায়বাবুর এই মূর্তিটি তৈরি হয়েছে রায় পরিবারের অনুমতি নিয়ে, জানালেন তিনি। মূল্য? প্রায় নিখুঁত মূর্তিটির দাম এখান থেকে কিনলে ৩ হাজার ৭০০ টাকা। কার্নিভ্যালের পর কিনতে গেলে আরও বেশি গাঁটের কড়ি গুনতে হবে। কিন্তু এত দাম! সাধারণ ক্রেতারা কী করবে? দীপকবাবু হাসলেন, ”তাঁদের জন্যও আছে। সকলেরই সাধ্যের কথা মাথায় রেখেছি আমরা। তাই দশ টাকা থেকে দশ হাজার টাকা, পকেট বুঝেই কেনাকাটি করা যাবে। আমরা চাই কেউ যেন দুঃখিত মুখে ফিরে না যান।”
যত বেলা বাড়ছিল ততই ভিড় বাড়ছিল। তবে সুপর্ণ বলছিলেন, ”এ আর কী ভিড় দেখছেন? আগের বার শেষদিন যা ভিড় হয়েছিল বলবার নয়। এবারও আশা করছি রবিবার তিলধারণের জায়গা থাকবে না এখানে।” শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, তাহলে মাত্র তিনদিন কেন? অন্তত হপ্তাখানেক কি এই কমিক্স উৎসব চালানো যায় না? আশা, আগামিদিনে নিশ্চয়ই সেকথা মাথায় রাখবেন উদ্যোক্তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.