গৌতম ব্রহ্ম: মাঝে বিশ্বসংগীতের মোৎজার্ট। দু’দিকে দুই নারী। দু’জনেই ভারতীয় সরগমে অস্ট্রীয় কম্পোজারকে সম্মান জানিয়েছেন। একজন ৪০ নম্বর সিম্ফনি জি মাইনর গেয়েছেন। অন্যজন ‘টার্কিশ মার্চ’। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে লতা মঙ্গেশকরের আশীর্বাদ জুটেছে শুধু একজনেরই। অন্যজন থেকে গিয়েছেন অন্তরালে।
বেহালার অক্সিটাউনের সমদীপ্তা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘জি মাইনর’ ভিডিও রিটুইট করেছেন সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar)। লিখেছেন, “আমায় একজন এই ভিডিও পাঠিয়েছেন। অস্ট্রিয়ান সংগীতকার মোৎজার্টের ৪০ নম্বর সিম্ফনি জি মাইনর ভারতীয় সরগমে দারুণভাবে গেয়েছে মেয়েটি। ওকে আশীর্বাদ করি, যেন একজন ভাল গায়িকা হতে পারে।” তারপরই রাতারাতি প্রচারের আলোয় চলে এসেছেন বেহালার সমদীপ্তা। এমনকী ইউটিউবের কাছে ‘কপিরাইট’ও দাবি করে বসেন। তাঁর সেই দাবিকে মান্যতা দিয়ে বাংলাদেশের এক তরুণীর ভিডিও মুছে ফেলা হয় ইউটিউব কর্তৃপক্ষের তরফে। সমদীপ্তাকে ‘পাইওনিয়ার’ ধরে নিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় চলে প্রচার। ভাইরাল হয় তাঁর ভিডিও।
যদিও ভাটপাড়ার বাসিন্দা সাহানা ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, ভারতীয় সরগমে মোৎজার্টকে তিনিই প্রথম গেয়েছেন। ৮ এপ্রিল ফেসবুকে ‘টার্কিশ মার্চ’ সিম্ফনি গেয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেন বর্তমানে আমেরিকার ম্যানহাটনে পদার্থবিদ্যায় গবেষণারত ওই ছাত্রী। সাহানার দাবি নিয়ে অবশ্য সমদীপ্তার বক্তব্য মেলেনি।
বিশ্ব সংগীত দিবসের আগের দিন ২০ জুন ফেসবুকে সমদীপ্তা ‘জি মাইনর’ পোস্ট করেন। বঙ্গ তনয়ার প্রয়াস মনে ধরে লতা মঙ্গেশকরের। নিখুঁত গায়কীর প্রশংসা করে মেয়েটির গানের ভিডিও শেয়ার করেন তিনি। তারপরেই যেন বদলে গেল সমদীপ্তার জগৎ। শুভেচ্ছার জোয়ারে ভেসে যাচ্ছেন তিনি। সমদীপ্তা অবশ্য এত কিছু ভেবে গাননি। চলতি হাওয়ার বাইরে গিয়ে অন্যরকম কিছু গাইতে চেয়েছিলেন। তখনই মোৎজার্টের ‘জি মাইনর’ নিয়ে চেষ্টা করেন। দেবজ্যোতি মিশ্রর কাছে তালিম নেওয়ার সময় মোৎজার্ট নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু তাঁর সেই গান যে তাঁর দেবতার কাছে এভাবে পৌঁছে যাবে, ভাবেননি সমদীপ্তা।
অন্যদিকে, কিছুটা হলেও মন খারাপ সাহানার। সুদুঢ় ম্যানহাটন থেকে ফোনে ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে জানিয়েছেন মনোবেদনার কথা। বলেন, “আমিই প্রথম মোৎজার্টের সিম্ফনিকে ভারতীয় সরগমে উপস্থাপনা করি। ৮ এপ্রিল ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করি। কিন্তু সমদীপ্তা আমাকে কোথাও স্বীকৃতি দেয়নি। উলটে ও ‘কপিরাইট’ দাবি করেছে। এটা আমার ঠিক মনে হয়নি।”
ইউটিউবে শুনেই মোৎজার্টকে ভারতীয় স্বরলিপিতে বন্দি করেন সাহানা। সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কের ছাত্রী শখের বশেই গানবাজনা করেন। সাহানার ভিডিও এখনও পর্যন্ত ৫৯হাজার ভিউ, ৩০২ টি শেয়ার হয়েছে। সাহানার আক্ষেপ, “আমার ভাগ্যে লতা মঙ্গেশকরের আশীর্বাদ জোটেনি।” যদিও তবলাবাদক শুভজ্যোতি গুহ, সন্তুরবাদক সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়, মিউজিক কম্পোজার ইন্দ্রজিৎ দে ইন্দ্র, গজলশিল্পী অমৃতা চট্টোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীরা সাহানার পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, ‘পাইওনিয়ার’-এর স্বীকৃতি সাহানারই প্রাপ্য। সরোদবাদক তেজেন্দ্রনারায়ণও সাহানার থেকে লিঙ্ক চেয়ে পাঠিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.