২৩শে শ্রাবণ চলে গেলেন তিনি। তিনি মানে সাহিত্য-সংস্কৃতিপ্রেমী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। একদা সুহৃদকে নিয়ে স্মৃতিচারণায় কবি সুবোধ সরকার।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর শয়নে স্বপনে। প্রচুর লাইন তিনি নিমেষে বলতে পারতেন। বলতেন গান থেকে। নাটক থেকে। উপন্যাস থেকে। প্রবন্ধ থেকে। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া তাঁর একটা দিনও কাটত না। কী আশ্চর্য! বাইশে শ্রাবণ গড়িয়ে তেইশে শ্রাবণে প্রবেশ করতেই রবীন্দ্রনাথের (Rabindranath Tagore) কমিউনিস্ট অনুরাগী মুখ্যমন্ত্রী চলে গেলেন জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে। তাঁর চলে যাওয়াটাও ছুঁয়ে গেল রবীন্দ্রনাথকে।
সুনীলদা,সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বুদ্ধদেববাবুর (Buddhadeb Bhattacharya)ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন , তা তো আজ মিথ হয়ে আছে। থেকে থেকেই সুনীলদা বলতেন ওঁর মতো সুন্দর নরম মনের মানুষের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া উচিত হয়নি। যখন তিনি কাকা সুকান্তের (Sukanta Bhattacharya) কবিতা ‘আমার মৃত্যুর পর’ আবৃত্তি করেছিলেন, তাঁর গভীর ব্যারিটন ভয়েস আছড়ে পড়েছিল কাব্য জগতে! মায়কাভস্কির কবিতা অনুবাদ করে বাঙালি পাঠককে নতুন ভুবনে নিয়ে গিয়েছিলেন। পৃথিবীর আর এক প্রান্তের কবি, সান্তিয়াগোর কবি পাবলো নেরুদাকে টেনে নিলেন বুকে। বুদ্ধদেববাবুর মনন তৈরী হয়েছিল বিশ্ব সাহিত্যের প্রভাবে। অনেক ‘প্রগতিশীল’ প্রভাবশালী বিশ্বাস করতেন রবীন্দ্রনাথ বুর্জোয়া। তিনি সেই ধারণাকে সরিয়ে রবীন্দ্রনাথকে ‘ধ্রুবতারা’ বলে শিরোধার্য করেছিলেন।
আমি কেউ না। আমি তাঁর পার্টির কেউ না। আমি তাঁর পেরিফেরির মধ্যে কোথাও ছিলাম না। তখন আমি সামান্য এক তরুণ লেখক (Writer)। কিন্তু তিনি আমার কবিতা শুনে প্রকাশ্যে জড়িয়ে ধরেছিলেন। জেলা থেকে মাত্র এসেছি কলকাতায় (Kolkata)। কেউ তেমন করে আমাকে চেনেও না কলকাতায়। সেই সময় বুদ্ধদেববাবু যেভাবে আমার কবিতাকে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন, সেটা আমার শরণার্থী জীবনের যন্ত্রণাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। এই বুদ্ধদেববাবুকে আমি কোনদিন ভুলব না।
তিনি আপাদমস্তক বাঙালি যিনি বাঙালির ঐতিহ্য ও আধুনিকতাকে মিশিয়ে দিয়েছিলেন জীবনের প্রতিটি চতুষ্কোনে। প্রতিটি ত্রিভুজে। প্রতিটি অমীমাংসিত বৃত্তে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.