টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: আজকের ব্যস্ত সময়েও রাঢ় বাংলার মাটি থেকে মুছে যায়নি প্রাচীন লোকসংস্কৃতির সুর, ছন্দ। বারো মাসে তেরো পার্বণের ঐতিহ্য এখনও আঁকড়ে দিন যাপন করেন প্রান্তিক মানুষজন। পৌষপার্বণ মানেই পিঠে খাওয়ার ধুম। আর তার সঙ্গে সংক্রান্তির আগের দিন রাতভর টুসু গানের আসর। ইদানিং সেই চর্চায় কিছুটা ভাঁটা পড়লেও পিঠে খাওয়াতে কোনও খামতি নেই। বারো মাসের তেরো পার্বনের মধ্যে একটি অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্য লোক সংস্কৃতি উৎসব হলো টুসু। তবে টুসু গানের সুরে কিছুটা ভাটা পড়লেও পৌষ সংক্রান্তিতে পিঠে পুলি উৎসবকে উপভোগ করেন জেলার শহর ও গ্রামের মানুষ।
অগ্রহায়ন মাসে ইতু বিসর্জন দিয়ে পৌষে শুরু হয় টুসু বন্দনা। পৌষের ঠাণ্ডা আমেজ নিয়ে সারা পৌষ মাস ধরে টুসু আরাধনা করার পর পৌষ সংক্রান্তির আগের রাতে রাতভোর চলে টুসু গানের আসর। যাকে বলা হয় টুসুর জাগরণ। বাজার থেকে কাগজের তৈরি চৌডাল কিনে এনে তাকে সাজিয়ে জাগরন করা হয়। টুসুকে বিসর্জনের আগের রাতে চলে টুসু বন্দনা। কাগজ ও শোলা দিয়ে বানানো চৌডলকে সাজিয়ে তাকে গোল করে ঘিরে বসে নানা গান গেয়ে চলে টুসু গান। রাতভোর গানের পর এই চৌডালকে বিসর্জন দেওয়া হয় নদীতে বা পুকুরে।
আধুনিক জীবনে চৌডাল নিয়ে গানের রেওয়াজ কিছুটা কমেছে বলে বলছেন চৌডাল বিক্রেতারা। তাঁদের কথায়, গানের চর্চা কিছুটা ভাটা পড়েছে তাই চৌডাল বিক্রিতে তার আঁচ পড়েছে। আগে যেমন চৌডাল বিক্রি হতো, এখন সেই সংখ্যা অনেকটাই কম। তবে এখনও প্রাচীন সংস্কৃতি টিকে রয়েছে লালমাটির জেলায়।
বর্তমানে ব্যস্ততম সময়ে দাঁড়িয়ে টুসু গানের চর্চায় কিছুটা ভাটা পড়লেও, পিঠে খাওয়ার উৎসাহ কিন্তু একচুলও কমেনি। পৌষ সংক্রান্তির দিন মকর স্নান সেরে পিঠে-পুলির স্বাদ নিতে আজও শশব্যস্ত হয়ে ওঠে আমবাঙালি। বছরভর অপেক্ষা – পৌষ পার্বণ এলে নলেন গুড়ের সঙ্গে গরম গরম পিঠে খাওয়ার। নানা পুরের সংমিশ্রনে নলেন গুড় মাখিয়ে সংক্রান্তির সকালে পিঠে রোদ লাগিয়ে পিঠে খাওয়ার রেওয়াজ আজও অব্যাহত গোটা বাংলায়। পৌষের সংক্রান্তির আগের দিন রাতে মেঠো সুরের টুসু গানের কোরাস আর অন্যদিকে পিঠের গন্ধ আজও জানান দেয়, রাত পোহালেই পৌষ সংক্রান্তি বা পিঠে পুলি উৎসব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.