সুপর্ণা মজুমদার: উপন্যাস থেকে সিনেমা বা সিরিজ তৈরি করার সুবিধা-অসুবিধা দুই-ই থাকে। সুবিধা কাহিনির আলাদা ওজন থাকে। আর অসুবিধা? পাঠক যখন দর্শক হয়ে ওঠেন, তাঁর প্রত্যাশা পূরণ করা অসম্ভব কঠিন। এই কঠিন কাজের দায়িত্বই নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন পরিচালক রঞ্জন চান্দেল (Ranjan Chandel)। লেখক সত্য ব্যাসের উপন্যাস ‘চৌরাশি’ অবলম্বনে তৈরি করেছেন ‘গ্রহণ’ (Grahan Web Series) ওয়েব সিরিজ।
কাহিনির প্রেক্ষাপট বেশ আকর্ষণীয় চুরাশির শিখ দাঙ্গা এবং তার পরবর্তী সময়কে তুলে ধরা হয়েছে। তা নিয়ে মুক্তির আগে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। সিরিজ নিষিদ্ধ করার দাবি করেছিল শিরোমণি গুরুদ্বার পারবন্ধক কমিটি। তবে তা নিয়ে এখানে আলোচনা করব না। এখানে শুধুই সিরিজ দেখার অনুভূতি ভাগ করে নেব। পাঞ্জাব নয়, ‘গ্রহণ’ সিরিজে বোকারোর কাহিনি দেখানো হয়েছে। বোকারোর শিখ দাঙ্গা নিয়ে বিশেষ তদন্তের ভার দেওয়া হয় আইপিএস অফিসার অমৃতা সিংকে (জোয়া হুসেন)। সেই তদন্ত করতে গিয়েই অমৃতা জানতে পারে তাঁর বাবা গুরসেবকই (পবন রাজ মালহোত্রা) সেই দাঙ্গার অন্যতম মুখ্য অভিযুক্ত ঋষি রঞ্জন। অমৃতার পায়ের তলার মাটি যেন সরে যায়। তবে নিজেকে সামলে নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যায়। নিজের মতো করে সত্য জানার চেষ্টাও করে। কী জানতে পারে অমৃতা? সেটা না হয় আট এপিসোডের সিরিজে দেখে নিলেন!
নন-লিনিয়ার ফরম্যাটের উপর জোর দিয়েছেন পরিচালক। অতীতের সঙ্গে ক্রমাগত বর্তমান সময়কে মিলিয়ে দিয়েছেন। তবে দাঙ্গার ইতিহাসের থেকেও সিরিজে যেন মুখ্য হয়ে উঠেছে ঋষি ও মন্নুর (ওয়ামিকা গাব্বি) প্রেম ও বিরহের কাহিনি। শুরুটা ভালই করেছিলেন পরিচালক সাংবাদিকের হত্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখানো হয়েছিল। তবে তারপর সময়ের সঙ্গে কাহিনির গতি ক্রমশ কমে এসেছে। আবার শেষ দুই এপিসোডে যেন সমস্ত কিছু বড় তাড়াতাড়ি হয়ে গিয়েছে। আইপিএস অফিসার হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন জোয়া হুসেন (Zoya Hussain)। ‘মুক্কাবাজ’ খ্যাত অভিনেত্রীর একটা সহজাত শার্পনেস রয়েছে। যা একজন আইপিএস অফিসারের ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজন ছিল। জোয়া চেষ্টা তো করেছেন, কিন্তু কোথাও যেন একটু নিস্তেজ লেগেছে তাঁকে। তবে অমৃতা যখন নিজের জন্মের সত্য জানতে পারে সেই দৃশ্যে জোয়ার চোখের যন্ত্রণার অভিব্যক্তি ভাল।
‘জামতারা’ খ্যাত অভিনেতা অংশুমান পুষ্কর (Anshuman Pushkar) এ ছবিতে ঋষি রঞ্জনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর ও ওয়ামিকা গাব্বির (Wamiqa Gabbi) প্রেমে আটের দশকের ফ্লেভার দিতে চেয়েছেন পরিচালক। মেজাজি দৃশ্যগুলিতে অংশুমানকে ভাল লেগেছে, তবে শেষের আবেগঘন দৃশ্যে তিনি বেশ দুর্বল। গুরসেবকের চরিত্রে পবন রাজ মালহোত্রা (Pavan Raj Malhotra) নিজের ভূমিকা পালন করেছেন। তবে তাঁকেই দুই সময়ের কাহিনির যোগসূত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারেননি পরিচালক। চুন্নু সিংয়ের চরিত্রে টিকম জোশীর অভিনয়ে আরও একটু ধূর্ততা প্রতাশ্যা করেছিলেন। সব মিলিয়ে চেষ্টা ভালই ছিল, তবে আগোছালো ভাবও চোখে পড়েছে। মতামত ব্যক্তিগত। বাকিটা আপনি ডিজনি প্লাস হটস্টারে (Disney+Hotstar) দেখে নিতেই পারেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.