নির্মল ধর: সংস্কৃতির রাজধানী কলকাতায় শুধু নয়, পুরো রাজ্য জুড়েই ‘জওয়ান’, ‘পাঠান’দের হুংকারে দামি বাংলা সিনেমারই মুমূর্ষু অবস্থা গত দু’সপ্তাহ ধরে। সেখানে, স্বাধীন ভাবনা নিয়ে গরিবি বাজেটে একটি বাংলা ছবি বানিয়ে দুর্ধর্ষ বাঘ-সিংহের সামনে ভিজে বিড়াল হওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ থাকে না। তবুও সাহস করে সেই দুর্গমপথে হাঁটলেন অনামি প্রযোজক উৎপল পাল ও পরিচালক পলাশ দে। এদের কিঞ্চিৎ সাহস অবশ্য যুগিয়েছে নন্দন কর্তৃপক্ষ।
উৎপল-পলাশ জুটির বানানো ‘অসুখওয়ালা’ (Asukhwala) ছবিটি তৈরির সময়কাল ২০১৭-১৮ সাল। ২০১৮ সালে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ‘বাংলা প্যানোরামা’ বিভাগে জায়গা পেয়েছিল। তবুও সেই ‘অসুখওয়ালা’র দর্শক-ডাক্তারের সামনে পৌঁছতেই লেগে গেলো প্রায় ছ’টা বছর। না, আগে এলেও যে দর্শক-ডাক্তার এই ছবিকে আইসিইউ থেকে সুস্থ করতে পারতেন এমন কোনও গ্যারান্টি ছিল না। এখন তো নেইই। তবুও মৃত্যুর আগে গঙ্গার জল মুখে দেবার মতো সুযোগ পেলেন নির্মাতারা – এটাই আশাতিরিক্ত পাওনা।
গল্পের নায়ক রুদ্র (সায়ন ঘোষ) গ্রামের এক ওষুধের দোকান চালায়। যা হয় আরকি! আমাদের মতো বিপিএল মেজরিটির গ্রামে ওষুধবেচা রুদ্রই গ্রামবাসীর কাছে হাতুড়ে বা হাফ ডাক্তার। লোকের গোপন অসুখ ও চাহিদা মেটানোর কাজ যেমন সে করে, তেমনই অযাচিতে বিপিএলদের উদ্ধারও করে বৈকি! কিন্তু, তাঁর নিজের জীবনেও যে সন্তান না হওয়ার কারণে পুরো অন্ধকার – সেটা দূর করবে কে?
রুদ্রর তরুণী স্ত্রী মিষ্টি (স্নেহা চট্টোপাধ্যায়) সন্তান ধারণ করতে না পারার অক্ষমতায় ভীষণ অসুস্থ হতে থাকে। অথচ, রুদ্র স্ত্রীকে জানাতে পারে না নিজের ‘অক্ষমতা’র কথা। সেও ধীরে ধীরে হতে থাকে মানসিক রোগের শিকার। সিনেমা ভাষার ওপর অতি সাধারণ দখলদারি নিয়েই পলাশ দে রুদ্র ও মিষ্টি চরিত্রের জটিল অবস্থাকে, বিশেষ করে রুদ্রর অবস্থাকে পর্দায় আনতে গিয়ে অতি সরলীকৃত যে ন্যারাটিভের সাহায্য নিয়েছেন, সেটা এতটাই দুর্বল ও প্রিমিটিভ, কিংবা বলতে পারি হাতুড়েপনা, যে দর্শক ক্লান্ত হতে বাধ্য।
কী চিত্রগ্রহণে, কী সম্পাদনায়, কোথাও এতটুকু ঝকমকে পরিমণ্ডল সৃষ্টি তো দূরে থাক, সাধারণ হাতুড়ে বিদ্যেটাও নেই। অথচ গল্পটির মধ্যে সিনেমা সম্ভাবনার বীজ ছিল! কিছু স্বগতোক্তির দৃশ্য রেখেছেন পলাশ, কিন্তু সেটা ‘তৈরি’ করে উঠতে পারেননি। তাঁর ভাবনায় ছিল, কিন্তু এগজিকিউশনে রয়ে গেল খামতি! অভিনয়ে সায়ন ঘোষ এবং স্নেহা চট্টোপাধ্যায় কিন্তু চেষ্টায় ত্রুটি রাখেননি।
এমনকী, ছোট্ট চরিত্র পল্টুর ভূমিকায় টালিগঞ্জের অমিত সাহাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি রাস্তার পাশে দৃষ্টির আড়ালে পড়ে থাকা একটি হীরক খন্ড। কর্কট রোগে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বাভাস তিনি তাঁর মুখের ভঙ্গিতে নীরবে জানিয়ে দিয়েছেন। বহুবার বলেছি – এখনকার বিশ্বায়িত বাণিজ্যিক বাজারে সিনেমা করার বিলাসিতা কুঁজোর চিৎ হয়ে শোয়ার স্বপ্ন দেখার মতো। ‘জওয়ান’, ‘পাঠান’দের দল এঁদের দুরমুশ করতে সদা তারপর। তবুও উৎপল-পলাশরা স্বপ্ন দেখার চোখটা বন্ধ করছেন না, এটাই ওদের দুঃসাহস।
সিনেমা – অসুখওয়ালা
অভিনয়ে – সায়ন ঘোষ, স্নেহা চট্টোপাধ্যায়, অমিত সাহা প্রমুখ
পরিচালনায় – পলাশ দে
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.