ছবি ইনস্টাগ্রাম
শম্পালী মৌলিক: ইদের সময় হইচই-তে মুক্তি পেয়েছিল আশফাক নিপুন পরিচালিত সিরিজ ‘জিম্মি’। দেখতে দেখতে বাংলা নতুন বছর চলে এল। এই সময়েই সিরিজটা দেখে ফেললাম। প্রথমত, জয়া আহসানের ওয়েব প্ল্যাটফর্মে ডেবিউ, ফলে আগ্রহ ছিল। দ্বিতীয় কারণ, পরিচালক আশফাক নিপুনের ‘মহানগর’ আগে দেখেছিলাম, বেশ ভালো লেগেছিল। তাঁর ‘জিম্মি’ সাতটা পর্বের। নারীপ্রধান কাহিনি নিয়ে এটা তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দেখতে শুরু করলে একটানে দেখা হয়ে যাবে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটেই ‘জিম্মি’-র গল্প ডানা মেলেছে, কিন্তু ভারী হয়ে ওঠে না, কারণ গল্পের চলন ডার্ক কমেডি ঘেঁষা।
‘লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু’র আপ্তবাক্য বহন করে সিরিজটা। একটা মিথ্যে বললে আরও একশোটা মিথ্যের চাপ কীভাবে এসে জীবন বিপন্ন করে তোলে তাও দেখায়। সিরিজের কেন্দ্রে একজন মধ্যবিত্ত নারী রুনা লায়লা (জয়া আহসান), তার সাধারণ জীবন, আর ছোট ছোট স্বপ্ন। সরকারি বিদ্যুৎ অফিসের কেরানি লায়লা। সঙ্গে রয়েছে তার স্বামী আজাদ (ইরেশ জাকের) যে বেসরকারি কর্মী। এই দম্পতির জীবনের ছোটখাটো ওঠানামা সিরিজে গুরুত্ব পেয়েছে। তাদের জীবনে যেমন অভাব আছে, তেমন ভালোবাসাও। লায়লা কাজে দক্ষ, অফিসে তার সুনাম আছে। চলছিল লায়লার নিস্তরঙ্গ জীবন। এমন সময় ঘটনাচক্রে অফিসের রেকর্ড রুমের গুরুদায়িত্ব পায় সে। সেখানে তার হাতে এসে পড়ে একটা বাক্স, যাতে ভর্তি টাকা। লায়লা অসৎ নয়, অফিসকে বিষয়টা বলে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু বাদ সাধে তাঁর অভাবের জীবন আর স্বপ্ন ছোঁয়ার তাড়না। একবার টাকাগুলো হাতে নিয়ে ফেলার পর আর ভাবে না। স্বামীকে নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে চলে যায়, গয়নাও কিনে ফেলে! বিলাসবহুল হোটেলে গিয়ে স্বামীকে বলে দেয়, অফিস তার বেড়ানোর খরচ দিচ্ছে। এখানেই দেখা হয় প্রাক্তন প্রেমিক রানার (শাহরিয়ার নাজিম জয়) সঙ্গে। সাবপ্লট জমে যায়। ক্রমে দর্শক জানতে পারে লায়লার স্বামী চাকরিহারা কবেই। অন্যদিকে লায়লার অফিসে টাকার বাক্সের খোঁজ শুরু হয়। গুন্ডাদের আবির্ভাব হয় গল্পে। লায়লার গানের মাস্টার, বাড়ির সাহায্যকারীও জুড়ে যায় কাহিনিতে। পুলিশ, গুন্ডা, স্বামী, প্রাক্তন প্রেমিক, মিথ্যের মায়াজাল, আর লোভের অতিশয্যে লায়লার জীবন ততদিনে ছারখার। তবুও কৌশল করতে করতে এগোয় সে। জটিলতা থেকে সে পরিত্রাণ পাবে আদৌ?
এক টানেই পুরোটা দেখা হয়ে যায়। কয়েকটা অদ্ভুত বাঁক আছে সিরিজে। ওপারের রাজনৈতিক পালাবদল, নানা দুর্নীতি, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঝলকের মতো এলেও, সিরিজের প্রাণ লায়লার জীবনের চড়াই-উতরাই। লায়লার ফুর্তি, লোভ, প্রেম, অসহায়তা দুর্দান্ত তুলে ধরেছেন জয়া। তাঁর কমিক টাইমিং দুরন্ত। পালকের মতো হালকা অভিনয় তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন! শেষ সিকোয়েন্সে তাঁর স্বগতোক্তি দুর্দান্ত। আজাদের ভূমিকায় ইরেশ জাকের বেশ শক্তিশালী। শেষ ভাগে লায়লা আর আজাদের মুখোমুখি দৃশ্য মনে রেখে দেওয়ার মতো। সব মিলিয়ে জয়া আহসানের ওয়েব ডেবিউ ছাপ রেখে গেল। তাঁকে ছাড়া ‘জিম্মি’র লায়লা ভাবা যেত না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.