শম্পালী মৌলিক: কোনও ছবির নাম যদি হয় ‘রি-রুটিং’, তাহলে নতুন করে শিকড় খোঁজা বা পথ অন্বেষণের কথা বলবে এমনটাই মনে হয়। কঙ্কনা চক্রবর্তীর ৩৫ মিনিটের ছবির বার্তাও তেমনই। নতুন করে ভাবার কথা বলে, কোথাও গিয়ে দুই প্রজন্মের সেতুবাঁধার বার্তাও দেয়। একরাতের ঘটনা নিয়েই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিটি করেছেন তিনি। কিন্তু কল্পনার প্রতিটি পরত অনেক রাত পার করে দিতে পারে। দুটি মানুষের গল্প। আর অসমবয়সি সেই দুটি মানুষের জীবন কীভাবে বদলায় ছবিতে দেখার।
সাইকোলজিকাল থ্রিলারটি পুরোপুরি সাদা-কালোয়, ফলে বেশ লাগে দেখতে। রাতের শহরের চালচিত্র ধরা পড়ে সেখানে। গুয়াহাটি শহর গল্পের প্রেক্ষিত। এখানেই অবিনাশ (বরুণ চন্দ) আর কুহুর (কঙ্কনা চক্রবর্তী) এক রাতের সফর। এই শহরেই পড়াশোনা করতে এসেছে কুহু। রাতের দিকে সে ‘ক্যাব’ চালায়, বাড়তি টাকা উপার্জনের উদ্দেশ্যে। কারণ তার প্রয়োজন। মেয়ের গাড়ি চালানোতে বাবার বারণ থাকলেও কুহু শোনে না।এইটুকু স্বাধীনতা তার চাই। শহরের জীবনে নিজের মতো থাকা এবং ইচ্ছে পূরণ তার তালিকায় এক নম্বরে। ঠিক যেমনটা এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ভাবে। এভাবেই গাড়ি চালাতে চালাতে একদিন অবিনাশের সঙ্গে দেখা হয়। যে ঘাটে চলেছে বোনের অস্থি বিসর্জন দিতে। কুহুকে তাকে পৌঁছে দিতে হবে। কুহু যে বিরাট রাস্তা চেনে তেমন নয়, আর পাঁচটা আনাড়ি ক্যাব ড্রাইভারের মতোই জিপিএস-এর বিশ্বাসে চলতে থাকে। ভূতনাথ ঘাটে পৌঁছনোর মাঝে মাঝে তাদের দু’জনের কথাবার্তা চলতে থাকে। গন্তব্যে পৌঁছনোর পরে কী হয় দেখার– আগাগোড়া টানটান কৌতূহল বজায় রাখে এই শর্টফিল্ম। বেশ সম্ভাবনাময় মেকিং।
কঙ্কনার আদিবাড়ি কলকাতায়, পরিবার সূত্রে প্রায়ই যাতায়াত এ শহরে। এ ছবির গল্প এবং পরিচালনা তাঁর নিজের। বেশিরভাগ সময়ে তিনি এখন লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকেন। অভিনয়, চিত্রনাট্য লেখালিখি নিয়ে চর্চা জারি রেখেছেন। টলিউডে তাঁর ডেবিউ অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্রেম টেম’ ছবিতে। এছাড়া ওয়েব সিরিজ ‘শব্দ জব্দ’, ‘রহস্য রোমাঞ্চ থ্রি’-তেও ছিলেন। খুব ইন্টারেস্টিং ফিচার্স কঙ্কনার ফলে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর। অন্যদিকে পরিচালক হিসাবে ‘উইমেন প্রেড অ্যান্ড প্রেইড আপন’-এর মতো ডকুর ড্রামাও করেছেন তিনি। যেখানে অমিতাভ বচ্চন, শ্যাম বেনেগাল, সুরেখা সিক্রির মতো অভিনেতারাও রয়েছেন। এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ ‘অনুরূপ’, ‘রিটেন বাই’ ও ‘মিরর ইমেজ’ এর মতো ছবিও করেছেন।
সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হল, মিস্টার বচ্চন তাঁর ‘রি-রুটিং’-এর ঝলক প্রকাশ করেছিলেন। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে আশ্চর্য যোগ রয়েছে তাঁর শুরু থেকে। কঙ্কনা তাঁর সমস্ত কাজ প্রথম শেয়ার করেন মিস্টার বচ্চনের সঙ্গে। এবার আসা যাক ‘রি-রুটিং’-এর অভিনয় প্রসঙ্গে। ছবিতে কঙ্কনার অভিনয় বেশ সাবলীল। বরুণ চন্দ খুব ভালো। প্রদীপ ভট্টাচার্য সংলাপ ব্যাতিরেকেই মুখর তাঁর অভিব্যক্তি নিয়ে। তবে চিত্রনাট্য কিছুটা মসৃণ হতে পারত। ম্যাক্সমুলার ভবন এবং এসআরএফটিআই-এ ছবিটির প্রদর্শনীতে বিপুল সাড়া পেয়েছেন কঙ্কনা। তাঁর আগামী কাজে অপেক্ষা রইল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.