সুপর্ণা মজুমদার: প্রিমিটিভ মাইন্ড। আদিম মন। সভ্যতার দৌড়ে মানুষ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। এমনটাই এই প্রজাতির ধারণা। কিন্তু প্রবৃত্তি? তার তো কোনও পরিবর্তন নেই। সময়ের দেওয়াল ফুটো করে বটগাছের শিকড়ের মতো বেরিয়ে আসে। তথাকথিত আধুনিক সভ্যতাতেও ফাঁক রেখে যায়। তাতেই গজিয়ে ওঠে ‘সিরিয়াস মেন’ (Serious Men)। শুক্রবার নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে সুধীর মিশ্র পরিচালিত নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি অভিনীত ছবিটি। ১ ঘণ্টা ৫৪ মিনিটের ছবিকে শুধু নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি (Nawazuddin Siddiqui) অভিনীত বললেও অত্যুক্তি হবে না। কারণ ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নওয়াজই সর্বেসর্বা। ব্যক্তিগত জীবনের যাবতীয় বিতর্ক দূরে সরিয়ে রেখে এই অভিনেতা যখন ক্যামেরার সামনে আসেন। শুধু অভিনেতা সত্তাই ভোরের ফুলের মতো বিকশিত হয়। গণেশ গায়তোণ্ডের পর থেকে এখনও পর্যন্ত আইয়ানই সেরা।
নেটফ্লিক্স (Netflix) অরিজিনাল ফিল্মের কাহিনি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এর কৃতিত্ব লেখক মনু জোসেফের (Manu Joseph)। তার উপন্যাসের উপর ভিত্তি করেই গোটা গল্প সাজানো। হ্যাঁ, ‘জানে ভি দো ইয়ারো’র পর থেকে সাধারণ মানুষ নিয়ে পরিচালক সুধীর মিশ্রর (Sudhir Mishra) ধারণা অনেকটাই পালটেছে। শিশুশিল্পী অক্ষনাথ দাস, নওয়াজের স্ত্রীর চরিত্রে ইন্দিরা তিওয়ারি, শ্বেতা বসু প্রসাদ থেকে দক্ষিণী তারকা নাসের পর্যন্ত সকলেই নওয়াজের পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবেই ছবিতে রয়েছেন। ‘বাস্তব’-এর পর বহুদিন বাদে বলার মতো চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেল মারাঠি অভিনেতা সঞ্জয় নারভেকরকে।
একটি মাত্র ব্যাকগ্রাউন্ড সং বাদে ছবিতে আর কোনও গান নেই। ভারতীয় সিনেমা যে গানের বাধ্যবাধকতা ছেড়ে বের হতে পেরেছে তার শ্রেয় OTT প্ল্যাটফর্মগুলিতে দিতেই হয়ে। ওয়েবের তাগিদেই দর্শকদের চাহিদা বেড়েছে। বিনোদন একেবারে ব্যক্তিগত স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। আঙুলের এক ইশারায় সারা বিশ্বের বিনোদনের দরজা খুলে গিয়েছে স্ট্রিমিং জায়েন্টগুলির কল্যাণে। আর এতেই ভাঙছে স্টিরিও টাইপের দেওয়াল। বদলাচ্ছে বিষয়, বদলাচ্ছে সুন্দরের সংজ্ঞা। ‘সিরিয়াস’ তারকা নয়, ‘সিরিয়াস’ অভিনেতাই এখন কাহিনির ভিত। আর সেই ভিত পরিচালককে গড়ে দিয়েছেন নওয়াজ। বলেছেন সাধারণ মানুষের অসাধারণ স্বপ্নের কাহিনি। সব স্বপ্নের জন্যই মূল্য চোকাতে হয়। সেই মূল্য দিয়েছে আইয়ান মণিও। যে সমাজের চোখে সে ধুলো দিয়েছে, তারই চোরাবালিতে ধীরে ধীরে ঢুকে গিয়েছে। নিজের ছেলেকেই নিজের তৈরি সার্কাসে জোকার সাজিয়েছে। ভারতীয় সমাজে মা-বাবাকে ঈশ্বরের মর্যাদা দেওয়া হয়। কিন্তু এই ইশ্বর রক্তমাংসে গড়া। তাই প্রত্যাশার ডানায় ভর করে উড়তে গিয়ে পড়েও যায়। ব্যথাও লাগে। এই ব্যথাই জীবনের পাথেয় হয়ে ওঠে। ‘প্রিমিটিভ মাইন্ড’ থেকে হয়ে ওঠে ‘সিরিয়াস মেন’।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.