সন্দীপ্তা ভঞ্জ: ভাটায় আটকে যাওয়া বাঘবিধবাদের জীবন আর জোয়ারে তলিয়ে যাওয়া তাঁদের স্বপ্নের মাঝেও দাঁতে দাঁত চেপে এক অদম্য লড়াইয়ের কাহিনি বলে পরিচালক রাজদীপ ঘোষের ‘বনবিবি’। অসমবয়সি প্রেম, বৈধব্যের যন্ত্রণা, ক্ষমতার আস্ফালন, সাম্প্রদায়িক হানাহানি… যাবতীয় উপকরণে ঠাসা চিত্রনাট্য।
সুন্দরবনের এক অন্যরকম গল্প বলে এই ছবি। বাঘবিধবাদের কোনও ধর্ম, ঘর-সংসার হয় না, তাঁরা সমাজ পরিত্যাক্তা। সেই করুণকাহিনির প্রেক্ষাপটে চিত্রনাট্য বেশ টানটান। কতিপয় দৃশ্য বাদ দিলে, সিনেম্যাটিক ভাষা মজবুত। দক্ষিণা রায় পালার বেশ কিছু অংশ গল্পের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে যেভাবে দেখিয়েছেন পরিচালক রাজদীপ ঘোষ, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরও চমৎকার। ভিন্ন স্বাদের গল্প হলেও দেখতে মন্দ লাগে না প্রান্তিক মানুষদের করুণ কাহিনি।
বর্তমান দেশে যেখানে সাম্প্রদায়িক হানাহানি, ধর্মের ধ্বজাধারীদের আস্ফালন, সেখানে সুন্দরবনের বিধবাপল্লীতে কিংবা বনবিবির পূজারী হিসেবে হিন্দু-মুসলিমের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কাহিনি তুলে ধরেছেন রাজদীপ ঘোষ। কনফ্লিকশন হিসেবে এক খ্রিস্টান দম্পতির চরম পরিণতির প্লটও রয়েছে।
পার্নো মিত্র বরাবরই ভালো অভিনেত্রী। ‘বনবিবি’ সিনেমাতেও তার অন্যথা হয়নি। বৈধব্যের যন্ত্রণা থেকে অসমবয়সি প্রেমের ইমোশন দক্ষতার সঙ্গেই ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেত্রী। বিধবাপল্লীর ‘হুজুর’ জাহাঙ্গীর-এর ভূমিকায় দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যও অনবদ্য। সমাজের রক্ষকই যখন ভক্ষক হয়ে যায়, তখন কী চরম পরিণতি হয়, তাঁর চরিত্রের মধ্য দিয়েই তুলে ধরেছেন পরিচালক রাজদীপ ঘোষ। তবে সুন্দরবনের ‘খোঁড়া বাদশা’ জাহাঙ্গীরের কুকীর্তির প্লটটা আরেকটু মজবুত হলে ভালো হত।
রূপাঞ্জনা মিত্র, মিশকা হালিমদের অভিনয় যথোপযুক্ত। কোথাও কারও অভিনয় অতিরঞ্জিত বলে মনে হয়নি। দক্ষ অভিনেতার ভিড়ে ঢাকি ‘হিমন’-এর চরিত্রে নজর কেড়েছেন আর্য দাশগুপ্তও। তবে স্বল্প দৈর্ঘ্যের চরিত্রে বড় সারপ্রাইজ পরিচালক রাজদীপ ঘোষের অভিনয়। তবে দুঃখের বিষয়, গোনাগুন্তি হলে ঠাঁই পেয়েছে এই ছবি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.