নির্মল ধর: না মশাই! কোনওভাবেই সেই ভারতীয় সিনেমার ঢ্যাঙা লোকটার (সত্যজিৎ রায়) ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ নামের সিনেমার সঙ্গে প্লিজ এই নব্য পরিচালক সপ্তাশ্ব বসুর বালখিল্য মার্কা থ্রিলারের ছাপ্পা দেওয়া ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’কে (Pratidwandi) গুলিয়ে ফেলবেন না। তাহলেই একেবারে চিত্তির! কোথায় রসমালাই আর কোথায় মাল! দু’নম্বরি ওষুধের কারবারি পলাতক দামানি, ফোর ফ্রন্টে থাকা গোবিন্দ আর রাজনৈতিক নেত্রী মায়ার (সায়নী ঘোষ) অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কোনও এক ডা. গুপ্ত এবং তাদের লাভজনক ব্যবসা নিয়ে এক থ্রিলিং গপ্পো লিখেছেন বটে সপ্তাশ্ব। কিন্তু তিনি তো আর হিচকক, ইয়ান ফ্লেমিং নন, নিতান্তই ভেতো বাঙালি। সুতরাং খুনের গপ্পো সাজাতে গিয়ে কত যে সুতোর গেরো এদিক ওদিক করে রেখেছেন, বুঝতেই পারেননি। প্রথম কথা একটি নামী নার্সিংহোমের নাম ‘ইজি কেয়ার’ হতে পারে বা হওয়া উচিত কি? সেখানে ভেজাল ইনজেকশন দিয়ে বেশ কিছু শিশু খুন করার পরও তা নিয়ে মিডিয়াতে কোনও উচ্চবাচ্য নেই! ডা. বক্সির (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) চাকরি গেল, সামাজিক হেনস্থা হল – সেগুলো জানানো হল কোথায়? শুধু দেখা গেল ডা. বক্সির বন্ধু সুকুমার সেন (রুদ্রনীল ঘোষ) নিজের মেয়েকে হারিয়ে উন্মদপ্রায়।
প্রতিশোধ নিতে সুকুমার নিজেই ডা. বক্সির একমাত্র সন্তানকে অপহরণ করেছে। আর সন্তানহারা বাবা সাহায্য চেয়েছে গোয়েন্দা সিদ্ধার্থর(সৌরভ দাস) কাছে, যে আবার নেত্রীর প্রাক্তন বন্ধু(নাকি প্রেমিক?)। ব্যস আর কী? গপ্পো ভূতের স্টাইলে সুন্দর সাজানো হয় গেল। এবার বাকি শুধু শেষ সুতোয় টান দেওয়া। পরিচালক সপ্তাশ্ব (Saptaswa Basu) শেষ টান দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সেই টানে কোনও চমক বা গমক নেই, যা দেখার জন্য দু’ঘণ্টা জনা কুড়ি দর্শকের সঙ্গে বসে থাকা যায়। এইসব পরিচালকরা দর্শককে ভাবেন কী? নিরেট নির্বোধ? নাকি IQ হীন জীব বিশেষ! প্রতিশোধ কে নিচ্ছে? কন্যা হারানো সুকুমার, নাকি ছেলে ও সম্মান হারানো ডাক্তার? এটা বোঝার জন্য পুরো ছবি দেখার প্রয়োজন নেই! দেখার মত কোনও পরিস্থিতিই তৈরি হয়নি।
তবুও বলব একা রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh) মানসিক ভারসাম্যহীন সুকুমারের চরিত্রে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। অনেকদিন পর ভাল লাগলো তাঁকে। শাশ্বত চিত্রনাট্যের (Saswata Chatterjee) বাইরে গিয়ে ডা. বক্সির চরিত্রের দু’টো দিকই তুলে ধরেছেন। তবে গোয়েন্দাপ্রধান সিদ্ধার্থর ভূমিকায় সৌরভ দাস (Saurav Das) কিন্তু অভিনয়ে কোনও বৈচিত্র্য আনতে পারেননি। ওঁর আগের অনেক ছবির মতোই লেগেছে। আসলে চরিত্র হয়ে ওঠার ক্ষমতা এখনও রপ্ত করতে পারেননি তিনি। সায়নী ঘোষ (Saayoni Ghosh) কিন্তু ‘টাইপ কাস্ট’ হয়ে যাচ্ছেন OTT প্ল্যাটফর্মে কাজ করার ফলে। একটু ভাবুন এবার নিজেকে নিয়ে। প্রতীক কুণ্ডুর সুরে দু’টি গান কোনও কাজেই আসেনি ছবির অগ্রগতিতে, বরং পিছিয়ে দিয়েছে। ডাব্বুর আবহ শুধুই ঝিংচ্যাক শব্দ। বাড়তি মাত্রা তাতে নেই। নামের ওজন ব্যবহার করে কখনও কোনও ভাল কাজ হয়েছে কি? বিশেষ করে সৃজন শাখায়!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.