চারুবাক: জিতের ছবি মানেই রোম্যান্সের কাটলেট, অ্যাকশনের বিরিয়ানি আর গানের মোড়কে কান ঝলসানো তন্দুরির স্বাদ। তাঁর ‘অসুর’ ছবির ট্রেলার দেখে আশা জেগেছিল এবার সম্ভবত জিৎ সময় ও চারপাশ দেখে শিক্ষা নিয়েছেন। আর ছবি পরিচালনার জন্য ডেকে নিয়েছেন ‘বাবার নাম গান্ধীজি’ ও ‘রসগোল্লা’র পাভেলকে। সুতরাং ভাবনায় এবং পরিবেশনায় ‘অন্যরকম’ একটা সিনেমার দেখা মিলবে।
হ্যাঁ। তা মিলেছে বইকি! বাস্তবতার ১০০ মাইল দূরে দাঁড়িয়ে বিশ্বাস নামে বস্তুটির ঘাড় মটকে পাভেলকে দিয়ে এমন চিত্রনাট্য লিখিয়েছেন প্রযোজক কাম নায়ক জিৎ। যেখানে আগের প্রায় এক ডজন ছবির মতোই তিনি নিজে প্রায় প্রতিটা ফ্রেমে হাজির। এতদিন জানা ছিল না ‘মান্ডি’ কারও পদবী হলে সে অসুর বংশের হয়। আর মাথায় সাধু-সন্ন্যাসীর নতো চুলের ঝুরি নামে। জানা গেল, কিগান মান্ডি নামের এই অসুর-মানুষটি আবার শিল্পীও। তার কর্মকাণ্ডে থাকে অসুরিক বিশালত্ব। রেলের কামরার টয়লেটকে কয়েক মিনিটে ক্যানভাস করতে পারে কিগান। পারে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুর্গা বানিয়ে কলকাতা শহরে আলোড়ন তুলতে। প্রতিযোগিতায় শহরের প্রায় সব পুরস্কারগুলো পকেটস্থ করেই না, একই সঙ্গে সাম্প্রতিক দুর্গাপুজোয় কর্পোরেট কিছু সংস্থার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের ব্যাপারটাও ফাঁস হয়ে যায়। অবশ্য গপ্পোর মূল জায়গা বারবার ত্রিকোণ প্রেমের দিকে সরে গিয়ে বিশ্বাসের জায়গাটি আরও দুর্বল করে।
বোধিসত্ত্ব-কিগান-অদিতি তিনজন ভাল বন্ধু কলেজে পড়ার সময় থেকেই। কিগানের সঙ্গে এক দুর্বল মুহূর্তে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ায় অদিতি মা হয়ে যায়। কিন্তু সে বিয়ে করে বোধিসত্ত্বকে। কেন? উত্তরহীন চিত্রনাট্য। বিয়ের পরেও কিগানের সঙ্গে শুধু ‘বন্ধুত্ব’ নয়, ‘প্রেম’টাও বজায় রাখতে চায় অদিতি। কেন? উত্তরহীন। ফলে বোধিসত্ত্ব-অদিতির ডিভোর্স হলেও সন্তানকে দেখার অধিকার নিয়ে চলছে বাগবিতণ্ডা। কেন? সেক্ষেত্রেও চিত্রনাট্য উত্তরহীন। এহেন কিগানকে শহরের বৃহত্তম দুর্গা গড়ার অনুদান পাইয়ে দেয় অদিতিই। আর সেই প্রতিমা ধ্বংসের ‘প্ল্যান’ করে বোধিসত্ত্ব। প্রথমে প্রতিমা দেখতে গিয়ে অভাবনীয় ভিড়ে স্ট্যাম্পেড হয়ে বেশ কিছু লোক আহত হওয়ায় পুজোটা বন্ধই হয়ে যায় অদেখা ‘দিদি’র আদেশে (পুলিশ কমিশনারকে ফোনে দিদি তেমনই নির্দেশ দেন)।
কিন্তু মহৎ সৃষ্টি তো বারবার হয় না। হতে পারেও না। কিগান তাই নিজের হাতেই ধ্বংস করে নিজের সৃষ্টি। তবে সেটা কতটা হতাশায়, বা কতটা বোধির প্রতি রাগে, কিংবা কতটা অদিতির প্রতি অনুরাগে সেটা স্পষ্ট হয় না। কারণ ছবির একেবারে শেষ মুহূর্তে কিগান জানতে পারে অদিতি-বোধির সন্তান বাবুয়ার ‘বায়োলজিক্যাল বাবা’ সে-ই। এমন হাস্যকর নাটক নিয়ে এই ২০২০ সালে দর্শককে বোকা বানানোর চেষ্টাটা আরও বেশি হাস্যকর। জিৎ এতদিনও বুঝতে পারলেন না বাংলা সিনেমার শরীর অনেক পালটে গিয়েছে। বদলেছে মনটাও। এখনও তার কোনও হদিশ পেলেন না তিনি। আর কি পাবেন কখনও? পাভেলের মতো বুদ্ধিমান, ফিল্ম জানা তরুণের ব্রেন-ওয়াশ করে ফেললেন! অভিনয় নিসে কিস্স্যু বলার নেই। জিৎময় এই ছবিতে তিনিই ‘অসুর’। আবিরের অবস্থা কার্তিকের মতো সাজুগুজু করে ভিলেনি করা। আর নুসরতের অবস্থা কলাবউয়ের মতো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.