সুপর্ণা মজুমদার: শুরু থেকেই শুরু করা যাক। সেই যে হলুদ ট্যাক্সি। সেই যে কুমার শানুর গান। সেই যে কলকাতা। গলি তস্য গলি। বাঙালি। ফুটবল। ইলিশ মাছ আর চিংড়ি। বাঙালিয়ানা নিংড়ে নিয়ে নিজের ছবির মধ্যে ঝালমুড়ির মতো মিশিয়ে পরিবেশন করেছেন প্রযোজক-পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (Parambrata Chattopadhyay)। তার সঙ্গে উপরি পাওনা অসাধারণ কিছু অভিনেতা। বাংলা সিনেমার সেই ধন্যি সনাতন রসবোধ ফিরিয়েছেন। যা মনে করিয়ে দিয়েছে জহর গঙ্গোপাধ্যায়ের বহু পুরোনো এক সংলাপ। ‘বলেছিলাম না, শিল্ড আমি গ্রামের বাইরে যেতে দেব না!’
প্রথমে সিনেমার নাম ‘খেলেছি আজগুবি’ রাখা হয়েছিল। পরে হয় ‘তিকি তাকা’ (Tiki-Taka)। নামে কীই বা এসে যায়! সেটা প্রমাণ করলেন পরিচালক পরমব্রত। নিজের পরিচালনাতেই নিজের ম্যানারিজম ভেঙে চুরমার করে রাজু হয়ে উঠলেন। ট্যাক্সি চালায় রাজু। কলকাতার চিরা পরিচিত হলুদ ট্যাক্সি। অ্যাপ ক্যাবের রমরমায় যার কদর হয়তো একটু কমেছে। কিন্তু বাঙালির বরাবরই নস্টালজিয়া বেশি। আর তাতে ভর করে গল্পের গরু গাছে উঠলেও কারও কোনও আপত্তি নেই। তা সে সেনেগাল থেকে মাদক পাচার করতে আসা ‘খেলেছি আজগুবি’ ডার্বি খেলুক না কেন। আর তাকে নিয়ে হঠাৎ করে বনলতা মানে বনি ব্রেকিং নিউজ করে ফেলুক না কেন।
গল্পের পরতে পরতে রয়েছে নিখাদ হাস্যরস। সংলাপের চাটুকারিতায় মন ভরিয়েছেন রোহন ঘোষ ও শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিমার যে কাঠামো তাঁরা তৈরি করেছেন। তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়। রাজুর চরিত্রে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় একেবারে মিলেমিশে গিয়েছেন। কামাতুর সিনিয়ারকে পরোক্ষে জবাব দিয়ে চাকরি বাঁচানো থেকে মুম্বই পরিচালক হয়ে মাদক পাচারকারীর ডেরায় ছদ্মবেশে ঢুকে পড়া, বনির চরিত্রের প্রতিটি পরতে নিজেকে উজার করে দিয়েছেন ঋতাভরী চক্রবর্তী (Ritabhari Chakraborty)। ‘খেলেছি’র চরিত্রে সেনেগালের অভিনেতা ইমোনা এনাবুলুকেও (Emona Enabulu) সুন্দর ব্যবহার করেছেন পরমব্রত। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও সূত্রধর হিসেবে ঋদ্ধি-সুরঙ্গনা জুটি মানানসই। সংগীতের দায়িত্বে ছিলেন নীল দত্ত ও অর্ক মুখোপাধ্যায়।
তবে আলাদা করে বলতেই হয় সিনেম্যাটোগ্রাফার রবি কিরণের কথা। ZEE5-এ মুক্তি পাওয়া ছবিতে কলকাতাকে (Kolkata) যেভাবে পর্দায় তিনি তুলে ধরেছেন। তাতে করোনা সংকটের আবহে যাযাবর মনটা চুড়ান্ত প্রশ্রয় পেয়েছে। আহা! আবার ফিরুক তিলোত্তমার সেই চেনা ভিড়। আবার হয়ে উঠুক পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আবার ডার্বির আগে মোহনবাগান (Mohun Bagan) বনাম ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) থুড়ি ‘নতুনবাগান’ বনাম ‘ইয়ংবেঙ্গল’-এর ডার্বি জমে উুঠুক। ফুটবল পাগল বাঙালি নাওয়া-খাওয়া ভুলে প্রিয় দলের জেতার জন্য পুজো দিতে বসে যাক। ঘামের গন্ধ ভরা বাজারে ইলিশ বনাম চিংড়ির কেনার লড়াই জমে উঠুক। চায়ের দোকানে খবরের কাগজ হাতে চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ হয়ে যাক। স্টেডিয়াম গুলোয় চিৎকারে কান পাতা দায় হোক। আজগুবি যতোই হোক স্বপ্ন তো দেখতেই হবে। আর তার প্রত্যেকটা ‘সিন’ জুড়ে গড়ে তুলতে হবে সিনেমা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.