সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘ফাইট কোনি ফাইট’- বাঙালির কাছে এ যেন লড়াইয়ের এক অমোঘ মন্ত্র। নেহাতই এক ছবির সংলাপের এহেন উত্তরণ অবশ্যই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের তুলনারহিত অভিনয়ের গুণে। তবে তা যেন জানিয়ে দেয় বাঙালির অস্থিমজ্জায় কীভাবে মিশে আছে খেলা। বাঙালির মহানায়ককেও তাই লার্জার দ্যান লাইফ হয়ে উঠতে খেলার মাঠে হারাতে হয় প্রতিদ্বন্দ্বীকে। ‘সপ্তপদী’ ছবির সে দৃশ্য আজও বাঙালির চোখে ভাসে। কিংবা উঠতি খেলোয়াড় সাহেব-এর যন্ত্রণা বাঙালি দর্শক হৃদয় দিয়েই অনুভব করেছে। তবু যত দিন গিয়েছে বাংলার সিনে মানচিত্র থেকে যেন উধাও হয়েছিল খেলাধুলো। মাঝে মধ্যে তা ফিরে ফিরে এসেছে বটে, তবে খেলাধুলোকেই কেন্দ্রীয় চরিত্র করে বাঙালির বক্স অফিস বহুদিন কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্বাদ পায়নি। সম্প্রতি ‘মেসি’ ও ‘চ্যাম্প’-এর দৌলতে আবার টলিপাড়ায় জমেছে খেলা।
১৯৭১-এ মুক্তি পায় উত্তম কুমার, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, জহর রায় ও জয়া ভাদুড়ী অভিনীত ‘ধন্যি মেয়ে’। মহানায়ক থাকলেও এ ছবির নায়ক আসলে বাঙালির ফুটবল উন্মাদনাই। সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল- গানের এ কথা আসলে তুলে ধরেছিল বাঙালির নাড়ির স্পন্দনকেই।
এরপরই ১৯৭৬ ও ১৯৮১-এ ফুটবলকে মুখ্য চরিত্রে রেখেই মুক্তি পায় ‘মোহনবাগানের মেয়ে’ ও ‘সাহেব’। তাপস পালের ছবি ‘সাহেব’ তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। ফুটবল থেকে এবার একটু মুখ ফিরিয়ে বাংলা ছবি বলে ওঠে ‘ফাইট কোনি ফাইট’। মতি নন্দীর উপন্যাস অবলম্বনে এক উঠতি সাঁতারুর গল্প নিয়ে তৈরি ছবি ‘কোনি’তে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ের জোরে ঘরে আসে জাতীয় পুরস্কার। এর প্রায় দু’দশক পর বাংলা ছবিতে ফিরে আসে খেলাধূলা। ২০১১তে মুক্তি পায় ‘এগারো’। ২৯শে জুলাই ২০১১, ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসের এক স্বর্ণাক্ষরে লেখা দিন। ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে হারায় মোহনবাগান। প্রথমবার আইএফএ শিল্ড পায় কোনও ভারতীয় দল। লড়াইয়ের সেই গল্পকেই রিলে তুলে এনেছিলেন পরিচালক অরুণ রায়।
ওই বছরেই মুক্তি পায় হরনাথ চক্রবর্তীর ‘চলো পাল্টাই’। ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে বাবা ছেলের দ্বন্দ্বই ছিলো এই ছবির বিষয়বস্তু। ২০১৫তে পরিচালক হিসাবে নিজের কেরিয়ার শুরু করার সময় ফুটবলকেই নিজের ছবির প্রেক্ষাপট করেছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। বক্স অফিসে যদিও সেরকম প্রভাব ফেলতে পারেনি এ ছবি।
[ জানেন, কেন অভিনয় ছাড়তে চাইছেন কমল হাসান? ]
এবার মুখোমুখি ‘চ্যাম্প’ ও ‘মেসি’। দেবের প্রযোজনায় রাজ চক্রবর্তীর ‘চ্যাম্প’ এক বক্সারের জীবনের ওঠাপড়ার গল্প। মধ্যবিত্ত বাঙালির আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠার স্বপ্নপূরণের কাহিনি। আর সে ছবির মুখ্য চরিত্রে দেখা যাবে দেবকে। বড়পর্দায় চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে কোনও কসরত বাকি রাখেননি টলিউডের সুপারস্টার। ছবির প্রমোশনেও এক চুল জায়গা ছাড়তে নারাজ দেব। এই ছবির অন্যতম ইউএসপি, ছবিতে দেবের বিপরীতে দেখা যাবে তাঁর রিয়েললাইফ বান্ধবী রুক্মিনী মৈত্রকে।
অন্যদিকে আসছে অর্ণব রিংগো বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ‘মেসি’। এক মধ্যবিত্ত পরিবারে দুই ভাইয়ের ফুটবলের প্রতি ভালবাসা, পাড়া ফুটবলে মেসির জার্সি গায়ে তাঁদের জীবনযুদ্ধের গল্পই মেসি। আগামি ৯ই জুন মুক্তি পাবে ‘মেসি’ ও ইদে মুক্তি পেতে চলেছে ‘চ্যাম্প’। ফুটবলের মাঠ না বক্সিং-এর রিং, কোন জাদুতে মজবে বাঙালি সিনেপ্রেমীরা, বক্স অফিসে কে বাজিমাত করবে, এখন তারই অপেক্ষায় টলিউড।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.