Advertisement
Advertisement
Rose Apple

সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বেশি, বিপুল লক্ষ্মীলাভে জামরুল চাষই নয়া দিশা

ভারতে এখনও জামরুল চাষ তুলনামূলক কম।

Surprising facts of rose apple cultivation
Published by: Sayani Sen
  • Posted:May 21, 2025 5:04 pm
  • Updated:May 21, 2025 5:04 pm  

হিন্দিতে চমবক্কা। তামিলে জাম্বু। রসালো ও সুস্বাদু সেই ফলেরই বাংলায় নাম জামরুল। তৃষ্ণা নিবারণে অতুলনীয়। সাধারণত কাঁচা অবস্থাতেই দিব্যি খাওয়া যায়। কৃষকরা তেমন গুরুত্ব না দেওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন কম। অথচ বাজারে জামরুলের চাহিদা বিপুল। সরবরাহ কম, তাই দামও ভালো পাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। লিখছেন বারাকপুরের স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ড. তন্ময় সরকার। পড়ুন প্রথম পর্ব।

জা মরুল যা ওয়াটারি রোজ অ্যাপল (Syzygium aqueum.) নামেও পরিচিত, এই ফলটির বিভিন্ন আঞ্চলিক নাম রয়েছে, যেমন-বাংলায় “জামরুল”, হিন্দিতে “চমবক্কা” বা “পানিসেব”, তামিলে “জাম্বু” বা “পাহীর নাভাল”, মালায়ালামে “জাম্বাকা”, এবং তেলুগুতে “গুলাবিজামিচেত্ত্ব” বা “গুলাবিজামিকায়ালু”। এই রসালো ও সুস্বাদু ফলটির তৃষ্ণা নিবারণের গুণ রয়েছে এবং সাধারণত কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয়। এর উৎপত্তি দক্ষিণ ভারত ও মালয়েশিয়ায়, এবং এটি প্রধানত ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় চাষ করা হয়। ভারতে এখনও জামরুল একটি তুলনামূলকভাবে কম চাষকৃত ফল হিসেবে পরিচিত। বহু জায়গায় এটি বাড়ির আঙিনায়, অনাবাসী জমিতে কিংবা প্রাকৃতিকভাবে বন্যভাবে জন্মে। অনেক কৃষক এই ফলকে তেমন গুরুত্ব দেন না, যার ফলে বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন। ফলটি বাজারে চাহিদাসম্পন্ন হলেও সরবরাহ কম হওয়ায় দাম ভালো পাওয়া যায়। এছাড়া, ফলের পাশাপাশি এর পাতা, বাকল ও কাঠেরও ঔষধি ও অর্থনৈতিক ব্যবহার রয়েছে।

Advertisement

আবহাওয়া
জল জামরুল একটি উত্তমণ্ডলীয় ফলগাছ প্রজাতি এবং এটি সাধারণত ২৫°সে থেকে ৩২°সে তাপমাত্রার মধ্যে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। তুলনামূলক ঠান্ডা আবহাওয়া রোজ অ্যাপলের মধ্যে মোট দ্রবণীয় কঠিন পদার্থ (TSS) ও ত্বকের রঙ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মাটি জল জামরুল এবং রোজ অ্যাপল চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি সাধারণত হালকা অ্যাসিডিক থেকে হালকা ক্ষারযুক্ত এবং বালুময় থেকে মাটিময় পর্যন্ত হতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলে হালকা ক্ষারযুক্ত ও কাদামাটি জাতীয় জমিতে এই গাছ ভালো ফল দেয়। সফলভাবে জল জামরুল চাষের জন্য মাটিতে সর্বদা আর্দ্রতা বজায় রাখা জরুরি, অর্থাৎ জল সংকট যেন না হয়। মাটির pH ৫.০ থেকে ৬.৮ এর মধ্যে রাখা উচিত। জাত-এটি সাধারণত তিন প্রকার রঙের হয়, সাদা, লাল ও সবুজ, সাদা রঙের জামরুল সাধারণভাবে বেশি প্রচলিত, কিন্তু লাল ও সবুজ জামরুল এর বাজার চাহিদা ও দাম অপেক্ষাকৃত বেশি।

প্রজনন পদ্ধতি
জামরুল বীজ বা চারা থেকে উৎপাদন করা যায়। তবে মূলত কাটিং (cutting) ও এয়ার লেয়ারিং (air layering) বা গুটি কলম পদ্ধতির মাধ্যমে এর বংশবিস্তার করা হয়।

চারা রোপণের উপযুক্ত সময়
গাছ লাগানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল বর্ষাকাল, অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস। এই সময়ে মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকে, যা চারা গজানোর জন্য সহায়ক। তবে যেখানে সেচের সুবিধা রয়েছে, সেখানে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ এবং নভেম্বর মাসেও চারা রোপণ করা যেতে পারে।

চারা রোপণ
জামরুল চাষের জন্য জমিকে ভালোভাবে প্রস্তুত করতে হবে। গর্ত খোঁড়ার কাজ বর্ষা শুরু হওয়ার আগে সম্পন্ন করতে হয়। সাধারণত ১০১০১ মিটার আকারের গর্ত খোঁড়া হয়। গর্তগুলো ৭৫% উপরের মাটি এবং ২৫% ভালোভাবে পচানো গোবর সার বা কম্পোস্ট মিশিয়ে ভরাট করা হয়। উচ্চ ফলনের জন্য ৭৭ মিটার অথবা ৮ X ৮ মিটার দূরত্বে গাছ লাগানো আদর্শ।

জৈব সার ও রাসায়নিক সার ব্যবস্থাপনা
জামরুল গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং আল্ল বয়সেই ফল দিতে শুরু করে। তাই নিয়মিত এবং প্রায়ই সার দেওয়া প্রয়োজন। রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সার যেমন-মুরগির বিষ্ঠা, খরগোশের বিষ্ঠা অথব্য গরুর গোবর ব্যবহার করা যায়। জৈব সার ধীরে ধীরে পুষ্টি সরবরাহ করে এবং মাটির গুণগত মানও উন্নত করে। প্রথম বছরে প্রতি গাছে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম ফসফেট, ১০০ গ্রাম পটাশ এবং ১০ কেজি গোবর সার দেওয়া উচিত। বয়স অনুযায়ী এই মাত্রা বাড়তে থাকে এবং পূর্ণবয়স্ক গাছে বছরে ১ কেজি ইউরিয়া, ৭৫০ গ্রাম ফসফেট, ৫০০ গ্রাম পটাশ ও ২৫-৩০ কেজি গোবর সার প্রয়োগ করা হয়। সার দুদফায় দেওয়া ভালো। একবার জুন-জুলাইয়ে, আরেকবার সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে।

সেচ ব্যবস্থা
রোপণের পর প্রথম ১ বছর গাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য প্রতি ১৫-২০ দিন অন্তর সেচ দেওয়া প্রয়োজন। পরবর্তীতে গাছ বড় হলে এবং ফল ধরার সময় (বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি থেকে মে) ৩০-৪০ দিন অন্তর সেচ দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। জলাবদ্ধতা এড়াতে সঠিক নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা জরুরি।

প্রশিক্ষণ ও ছাঁটাই
জামরুল গাছ ছাঁটাইয়ের জন্য বসন্তের শুরু অথবা শীতের শেষ সময়টাই সবচেয়ে উপযুক্ত। পরিপক অবস্থায় এই গাছ ১২ থেকে ১৫ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে উচ্চতা ৪ থেকে ৫ মিটারের মধ্যে রেখে একটি ভালো কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব। প্রতিটি ফলন মৌসুমের পরে বা ফল আসার আগেই প্রতিবছর নিয়মিত ছাঁটাই করার পরমর্শ দেওয়া হয় যাতে গাছ কাঙিক্ষত উচ্চতায় থাকে এবং ভালো ফলন দেয়।

ফল ঝরা ও ফলধারণ
জামরুলে ফল ঝরা একটি গুরুতর সমস্যা। গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধির পর্যায়ে, অতিরিক্ত ফল ঝরা সাধারণত এমন কিছু সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত কারণে ঘটে যা পরাগায়ন, ফুলের নিষিক্তকরণ এবং ফল ধারনে প্রভাবিত করে। রোগ, পতঙ্গ এবং অন্যান্য আবহাওয়া সংক্রান্ত সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফলও ফল ঝরানোর কারণ হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অকালে ফল ঝরা সাধারণত ছোট গাছগুলিতে বেশি ঘটে। ফল ঝরা কমানোর জন্য যে একমাত্র কাজটি করা যেতে পারে তা হলো গাছগুলিকে ভাল। শারীরিক অবস্থায় রাখা এবং বাগানে যন্ত্রপাতি বা স্প্রেয়ার নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যা খারাপ ফলগুলোকে টেনে ফেলে ফেলতে পারে। গাছের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক বা হরমোন (PGR) প্রয়োগ এবং গিউলিং (গাছের ছাল রিং আকৃতির তোলা) ফুল ফোটার এবং ফলের গুণমান উন্নত করার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

ফল ঝরার কারণ
ফল ঝরাকে তিনটি প্রধান সময়কালের মধ্যে ভাগ করা যেতে পারে, যেমন: পোস্ট-ব্লুম ড্রপ, জন ড্রপ এবং প্রিহারভেস্ট ড্রপ। কিছু ফলের জন্য দুটি অতিরিক্ত ঝরা সময়কাল রয়েছে, যেগুলি হল গ্রীষ্মকালীন ঝরা এবং গ্রীষ্ম-শরৎকালীন করা। সাধারণত, ফল ঝরা হলো ফলের পেডিসেল (ডাঁটার অংশ) থেকে গাছের শাখার ডাঁটার বিচ্ছিন্নতা বা বিচ্ছেদ, যা ফলের স্টকে অক্ষয় স্তরের কোষের সৃষ্টি দ্বারা ঘটিত হয় এবং এটি শারীরিক এবং রসায়নিক ঘটন্য দ্বারা প্রভাবিত হয়। অক্ষয় হলো একটি শারীরিকভাবে নির্ধারিত কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া, যা একটি নিয়ন্ত্রিত উপায়ে প্রতিটি বিচ্ছিন্ন, বহু কোষীয় উদ্ভিদ অঙ্গ যেমন পাতা, ফুল বা ফল, গাছের দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এটি পরিবেশগত ঘটনাগুলির প্রতিক্রিয়া হিসেবে অথবা গাছের অঙ্গগুলোকে প্রোগ্রাম করা আকারে ঝরে পড়া যেমন ফুলের পরাগায়ন করার পরেও ঘটতে পারে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement