সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পাহাড় জঙ্গলঘেরা বাকি পৃথিবী থেকে কার্যত বহিষ্কৃত ছোট্ট গ্রাম যে বিদ্যুতের আলো দেখতে পারে তা কখনও স্বপ্নেও ভাবেননি এলাকারা বাসিন্দারা। তবে সেই অলীক স্বপ্ন আজ বাস্তব হয়ে দাঁড়িয়েছে কাতুলঝোরা, কাট্টাপার, বুকমারকার মতো গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে। স্বাধীনতার পর প্রথমবার এমনই ১৭টি গ্রামে জ্বলল বিদ্যুতের আলো। মাওবাদের ভয়াল সন্ত্রাস কেটে যাওয়ার পর সরকারের দৌলতে উন্নয়নের স্পর্শ লেগেছে গ্রামগুলিতে।
২০২৬ সালের মার্চ মাচের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে কোমর বেঁধে নেমেছে নিরাপত্তা বাহিনী। সেই লক্ষ্য পূরণে জোরকদমে শুরু হয়েছে সাফাই অভিযান ‘অপারেশন সংকল্প’। তবে শুধু মাওবাদী নিকেশ নয়, সমানতালে একদা মাও অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে শুরু হয়েছে উন্নয়নের কাজ। কাতুলঝোড়া, কাট্টাপার, বোদরা, বুকমারকা, সম্বলপুর, গাত্তেগাহান, পুগদা, আমাকোডো, পেটেমেটা, তাতেকাসা, কুন্ডলকাল, রাইমানহোরা, নাইনগুডা, মেটাতোডকে, কোহকাটোলা, এদাসমেটা এবং কুঞ্জকানহার নামক গ্রামগুলির বাসিন্দাদের কাছে এককালে বন্দুকের আওয়াজ ছিল নিত্যসঙ্গী। সেখানেই স্বাধীনতার পর প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী মাজরাটোলা বিদ্যুৎকরণ যোজনার অধীনে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয়েছে কাজ।
সরকারের দাবি, একটা সময় ছিল যখন অত্যন্ত দুর্গম এইসব অঞ্চলে প্রবেশ করা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছিল সরকারের কাছে। তবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে এখন। মাওবাদের আতঙ্ক কাটার পর এখানে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ জায়গায় ঢুকেও গিয়েছে বিদ্যুৎ। তৈরি হচ্ছে রাস্তাঘাট। সরকারের এই প্রকল্পের জেরে উপকৃত হতে চলেছে অন্তত ৫৪০টি পরিবার। এই ১৭টি গ্রামের ৫৪০টি পরিবারের মধ্যে ২৭৫টি পরিবার ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে গিয়েছে। বাকি পরিবারগুলিও শীঘ্রই বিদ্যুৎ পেয়ে যাবে। বন্দপ্তরের অনুমতি নেওয়ার পর তাতেকাসা গ্রামে ২৫ কেভিএ ট্রান্সফর্মার বসানো হয়। সেখান থেকে ৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ১১ কেভি লাইন ও ৮৭টি বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা হয়। ১৭টি গ্রামে আরও ১৭টি ট্রান্সফর্মার বসানো হয়েছে। সরকারের দাবি শীঘ্রই এখানকার বাকি অঞ্চলগুলিতেও বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শুরু হবে।
উন্নয়নের পাশাপাশি মাও দমন অভিযানও চলছে জোরকদমে। ‘অপারেশন সংকল্প’-এর জেরে বিহার, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানার মাও-অধ্যুষিত এলাকাগুলি থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে মাওবাদীরা আপাতত ঘাঁটি গেড়েছে ছত্তিশগড়-তেলেঙ্গানা সিমানায় অবস্থিত কারেগুট্টা পাহাড়ে। প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই এলাকা অত্যন্ত দুর্গম। পাহাড়ে রয়েছে ২৫০টির বেশি গুহা। এই গুহাগুলিই বর্তমানে মাওবাদীদের ঠিকানা। ৩০০ থেকে ৪০০ মাওবাদী ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে এখানে। মাওবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে প্রায় ৩ হাজার আধাসেনাকে নামানো হয়েছে। ঘিরে ফেলা হয়েছে গোটা পাহাড়। আধিকারিকদের দাবি অনুযায়ী, গত ২১ এপ্রিল থেকে ওই অঞ্চলে শুরু হয় অভিযান। এখনও পর্যন্ত ওই এলাকাজুড়ে অভিযান চালিয়ে ৩৫ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে যাদের মাথার দাম কয়েক কোটি টাকা। আশা করা হচ্ছে, এই অঞ্চল থেকে মাওবাদ নির্মূল করা সম্ভব হলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দিয়েছেন তা পূরণ করতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.