ফাইল ছবি
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হঠাৎ চার-পাঁচজন বন্দুকধারী ঘিরে ধরে তার বাবাকে। কিছু একটা জিজ্ঞাসা করার পরই মাথায় গুলি। পিছনেই মার হাত ধরে দাঁড়িয়ে ৯ বছরের ছেলে। রক্তের সমুদ্র বইছিল সে সময়। দৌড়ে যায় সে। বাবার মুখে জল ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। চোখের সামনে বাবাকে একটু একটু করে মৃত্যুর মুখে ঢোলে পড়তে দেখে। সেই দুঃস্বপ্নের দুপুর এক লহমায় অনেকটা বদলে দেয় তাকে। হঠাৎ বালক থেকে তরুণ হয়ে উঠেছে যেন! বাবার শেষকৃত্যের পর বালক দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বড় হয়ে সেনায় যোগ দেবে। বাবার মৃত্যুর বদলা নিতে হবে যে…।
২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে সেই ভয়ংকর দুপুরে প্রাণ হারান ২৬ জন পর্যটক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ওড়িশার প্রশান্ত সতপথী। স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন। ধর্ম পরিচয় জেনে যাকে খুন করেছে জঙ্গিরা। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে তা দেখে তাঁর ছেলে তনুজ। সেই হামলার প্রত্যাঘাত করেছে ভারতীয় সেনা। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৯টি জঙ্গিঘাঁটি।
অপারেশন সিঁদুরের কথা জানতে পেরেছে ছোট্ট তনুজও। বালেশ্বরে নিজের বাড়িতে বসে সাংবাদিকদের সে বলে, “অবশেষে সেনা ওই ঘটনার বদলা নিয়েছে। বাবার মৃত্যুর বদলা নিতে সেনায় যোগ দিতে চাই। তার জন্য যা যা পড়াশোনা করতে হবে তা করব।”
সেই দিনের ঘটনার পর ৯ বছরের তনুজ যেন ১৯ বছরের যুবক হয়ে উঠেছে! তনুজ জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা সুযোগ পেলে সে জানাবে, “জঙ্গিদের জন্য অন্য কোনও ছেলেকে যেন বাবাকে হারাতে না হয়। বাবাকে হারিয়ে এখন বুঝতে পারছি এক ছেলের জীবনে বাবার ভূমিকা কতটা।”
জীবনের অন্ধকারতম দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে যেন আরও শক্ত হয়ে ওঠে তনুজের কণ্ঠ। তাঁর কথায়, “বাবাকে গুলি করার পর মা ছুটে যায়। দেখে মাথা থেকে রক্ত ঝড়ছে। মা, বাবাকে জিজ্ঞাসা করে জল খাবে কিনা। বাবা হ্যাঁ বলেছিল। আমি মুখে জল দিয়েছিলাম। ওখানে আমার মাকে সাহায্য করার জন্য আমি ছাড়া পরিবারের কেউ ছিল না।”
তনুজের সেনায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছাকে সমর্থন জানিয়ে সদ্য স্বামী হারানো প্রিয়দর্শনী। তিনি বলেন, “যদি ছেলে সেনায় যোগ দিতে চায়, আমি ওকে সেই ভাবেই তৈরি করব। দেশের মানুষের আর্শীবাদ দরকার।” পিতৃশোকে আচমকা বদলে যাওয়া তনুজকে নিয়ে কিছুটা দুশ্চিতায় রয়েছেন তিনি। প্রিয়দর্শনী বলেন, “শৈশব হারিয়ে ফেলেছে ও। হঠাৎই যেন অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। ওর এই পরিবর্তন মেনে নেওয়াটা খুব মুশকিল। আমি চাই আমাদের ছেলে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠুক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.